For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

বন্য প্রাণী রক্ষা ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই বনবিভাগের

Published : Wednesday, 18 November, 2020 at 4:05 PM Count : 842

৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারের ভোলার সবটুকুই জলচর পাখি আর বন্যপ্রাণির আবাসস্থল। এর মধ্যে এক হাজার বর্গ কিলোমিটার বন রয়েছে। যেখানে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বন থেকে ভেসে আসা চিত্রা হরিণ লোকালয় থেকে উদ্ধার হয় প্রায়ই। আবার মিঠাপানির সন্ধানে বন থেকে চিত্রা হরিণ লোকালয় চলে আসে। এসময় শিকারীদের খপ্পরে পড়ে হরিণ। প্রায়ই হরিণের চামড়া ও মাংস উদ্ধার করা হয়। এ ধরণের দুই, একটি ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে এখানে। কিন্তু বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নেই। তাদের না আছে লোকবল, বণ্যপ্রানীকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা। দেখা যায়, বনের জমি দখল করে মানুষ ঘর-বাড়ি তুলে বসত করছে। বনের গাছ কেটে সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে। তবে বন্যপ্রাণি নিধনের দায়ে বন বিভাগের করা ২৫টি মামলা বর্তমানে চলমান আছে। বন এলাকার মানুষ যেমন বিপদে পড়া বন্যপ্রাণি উদ্ধার করে বন বিভাগের সহযোগীতায় অবমুক্ত করছে, আবার কিছু ক্ষমতাশিন ব্যক্তির সহযোগীতায় বন্যপ্রাণি নিধন হচ্ছে। যা বন বিভাগের লোকজনের ভুমিকাও সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ ২০১১ সালে বন বিভাগের তথ্য মতে, চরফ্যাশন ও মনপুরার বনে ১১ হাজার বন্যপ্রাণী ছিল। কিন্তু সেগুলো গত ৯ বছরে কয়েকগুন হবার কথা। কিন্তু বনবিভাগের কাছে এখন কোনো তথ্যই নেই যে কি পরিমান বন্যপ্রাণি আছে। 

যদি ২০১১ সালের প্রায় ১১ হাজার বন্য প্রাণী বেঁচেও থাকে, যদি আর না বাড়ে, তবে তারা ভালো নেই। শুকনো মৌসুমে বনে দেখা দেয় মিঠাপানি এবং খাদ্যের সংকট। আর বর্ষায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বনে টেকা কঠিন হয়ে পড়ে। খাবারের সন্ধানে ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্য প্রাণী নদী সাঁতরে লোকালয়ে চলে আসছে; পড়ছে শিকারিদের খপ্পরে। আবার উল্টো চিত্রও আছে। লোকালয়ে আসা হরিণ স্থানীয় লোকজন ধরে বনে ছেড়ে দেয়। গত ১০ বছরে শতাধিক লোকালয়ে আসা হরিণ বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার নদী সাঁতরে আসতে গিয়ে এবং জেলেদের জালে মারা পড়েছে অসংখ্য প্রাণী। তবে উদ্ধার করা হরিণ ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা কমেছে। জেলেরা উদ্ধার করে আনার পথে ক্ষমতাশিনদে হাতে পড়লে সেটি হজম হয়ে যায়। আরও মুক্ত হয় না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বন্য প্রাণীর জন্য চরফ্যাশন ও মনপুরার বনে নেই কোনো মিঠাপানির ব্যবস্থা। অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁচার জন্য নেই উঁচু কিল্লা। বন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় বনপ্রহরী আছে হাতেগোনা কয়েকজন। ফলে চরফ্যাশন ও মনপুরার বনে বন্যপ্রাণী একরকম অরক্ষিত পড়ে আছে। 

জানা যায়, চরফ্যশন উপজেলার কুকরি-মুকরি বনকে বলা হয় মিনি সুন্দরবন (শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদ)। এ রেঞ্জের আওতায় আছে দুটি বিট। এখানে শীতে ৮৪ রকম পরিযায়ী (জলচর) পাখি আসে। শীতে দেশ-বিদেশ থেকে পাখি পর্যটক ও বিশেষজ্ঞরা পাখি দেখতে আসেন।  চরপাতিলা বিটে আছে বার্ড ওয়াচ টাওয়ার। প্রায় ৬-৭ বছর আগে কুকরি-মুকরি বনে দুটি পুকুর খনন করা হলেও তা সংস্কারের অভাবে এখন মিঠা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এখানে বন বিভাগের রেঞ্জার, বিট কর্মকর্তা মিলে এক সময় ৩৫ জন স্টাফ ছিল। এখন সেখানে রেঞ্জার-বিট কর্মকর্তামাত্র ১০জন স্টাফ আছে। 
কালকীনি বিটে গার্ড আছে মাত্র একজন, দুজন মালি, তিনজন মাঝি, বিট কর্মকর্তাসহ আরও তিনজন। এদের কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, জেলার মনপুরা উপজেলার ঢালচর, হাজিরহাট পঁচা কোরালিয়া, মনপুরা, কলাতলীর চর, কালকীনি বন, তজুমদ্দিন উপজেলার চর পিয়াল, চর জহিরুদ্দিন, চর মামুন, চর মোজাম্মেল, ও চর ফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ও ঢালচর এলাকায় প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার একর বনাঞ্চল আছে। এ বনগুলোর প্রায় সব বনেই বন্য প্রাণী বাস করে। ম্যানগ্রোভ এই বনে হরিণ, বানর, ভোঁদর, মেছোবাঘ, বন্য মহিষ, গরু, উদ-বিড়াল, বন-বিড়াল, বন-মোরগ, সাপ, শিয়াল বসবাস করে। তবে এ প্রানীর ৯৫-৯৬ ভাগ হরিণ।

মনপুরা উপজেলার প্রায় তিন পাশে হাতিয়ার জাহাজমারা ও নলচিরা রে। এসব রেঞ্জে অসংখ্য হরিণ। এই নলচিরা রেঞ্জের অংশ ঢালচর ও বদনার চর। মনপুরা ইউনিয়নের ক্ষমতাশিনরা ঢালচরকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে দীর্ঘদিন যাবত বনের প্রাণী ও গাছগাছালি নিজেদের সম্পত্তি মনে করছে। যে যেমনভাবে পাচ্ছে হরিণ ধরে নিধন করছে। প্রায়ই বস্তাভর্তি হরিণের মাংস, রান্না করা হরিণের মাংস, হরিণের চামড়া, হরিণের মাথা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে ধরা পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভোলায় এ বছরে জোয়ারের উচ্চতা ছিল সাড়ে ৪ থেকে পোনে ৫ মিটার। এতে সাবেক ৩-৪ মিটারের বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, বনের চারপাশে কোনো বাঁধ না থাকায় জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বনা ল সহজেই প্লাবিত হয়। আর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি হয় সাত থেকে আট হাত উঁচু হয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এ সময় বন্য প্রাণী লোকালয়ে চলে আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। না হলে জোয়ারে ভেসে যায়। ভোলায় বন বিভাগের ৩৭টি ইউনিট রয়েছে। আছে মাত্র ৬৩ জন বনপ্রহরী আছে। বহু আগে মঞ্জুরীকৃত পদের প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ শূন্য। বন বেড়েছে কিন্তু প্রহরীর সংখ্যা বাড়েনি। জেলায় কমপক্ষে ২৫০-৩০০ প্রহরী ও অস্ত্র দরকার। অনেক বনে কোনো ক্যাম্পই নেই। ফলে বন পাহারা দেওয়ার কেউ থাকে না। বন কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করছেন। এখন রাজস্বখাতে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কুকরি-মুকরি বনে আগ থেকেই দুটি মিঠা পানির পুকুর কাটা ছিল। ওই বনে আরও চারটি পুকুর কাটা হবে। পুকুরের পাড় উঁচু করে বাঁধা হবে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের সময় বন্যপ্রাণি আশ্রয় নেবে। দায়িত্বে আসার পরে তিনি অসংখ্য প্রাণী উদ্ধার করে বনে ও নদীতে অবমুক্ত করেছেন।

এইচএফ/এইচএস



« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft