সিডরে অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়া সাগর এখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র |
![]() ঘূর্ণিঝড় সিডরের সঙ্গে দুই ঘণ্টা ‘যুদ্ধ’ করে অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় ৬ মাস বয়সী শ্রী সাগর শিকদার। সে এখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। পড়ে তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পড়ালেখার একান্ত ইচ্ছা থাকলেও প্রধান অন্তরায় দারিদ্র্যতায় বার বার লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। সাগরের বাবা শশী শিকদার বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত উপেক্ষা করে তালতলীর খোট্টার চরে অবস্থান করছিল প্রায় দুই হাজার জেলে পরিবার। আমাদের পরিবার তার মধ্যে একটি। রাত ৯টার দিকে সিডর উপকূলে আঘাত হানে। আঘাতের দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিবেশী সিদ্দিকুর রহমান বাইরে বের হন।' তিনি বলেন, 'এর মধ্যে ঢেউয়ের আঘাতে বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। স্ত্রী ও শিশু পুত্র সাগরকে আঁকড়ে ধরি। কিছুক্ষণ পর স্ত্রী আমাকে বলে তোমার ছেলেকে তুমি নাও আমি আর পারছি না। এই বলে স্ত্রী রঞ্জিতা রানী ছুটে মাদার গাছে উঠে যান। আমি ছেলেকে নিয়ে সাগরে ভাসতে থাকি। স্থানীয় খোকন মুন্সির বাড়ির নারকেল গাছের সঙ্গে ছেলেকে বেঁধে রেখে স্ত্রী রঞ্জিতা রানীকে খুজে মাদার গাছ থেকে নামিয়ে খোকন মুন্সির ঘড়ের চালায় আশ্রয় নেই।' খোকন মুন্সি বলেন, 'সিডরের রাতে আমি দেখতে পাই শশী ও তার স্ত্রী সাঁতার কাটতে কাটতে আমাদের ঘরের দিকে আসছে। ঘড়ের চালায় তখন আমরা সবাই উঠে আছি। ঘরের চালায় তাদেরও আশ্রয় হয়। এর ঘন্টা দুয়েক পর আমি তাদের সন্তানদের কথা জানতে চাইলে সাগরের মা হাউ মাউ করে কেদেঁ উঠে বলেন- নারিকেল গাছে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রবল বাতাস ও বৃষ্টির কারণে ছেলের কাছে তারা যেতে পারেননি। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে দেই। কিন্তু ৩ বার শিশুটি মায়ের হাত থেকে পানিতে পড়ে যায়, ৩ বারই শিশুটিকে উদ্ধার করি।' তিনি বলেন, 'এরপর মৃত ভেবে সাগরকে তার বাবা মা ফেলে দিতে চাইলে আমি বাধা দেই। বলি সাগরকে বুকে জড়িয়ে রাখেন। আনুমানিক ২-৩ ঘণ্টা পর সাগর প্রসাব করলে সন্তান বেচেঁ আছে বলে চিৎকার করেন শিশুটির মা।' সাগরের কাছে জানতে চাইলাম সিডরের কিছু কথা। সে জানায়, 'আমি বাবা-মায়ের কাছে শুনেছি সিডরের কথা। সিডর আমার জীবনে একটা ইতিহাস। আমি খোকন মুন্সি কাকার জন্য নতুন জীবন পেয়েছি। আমার অনেক ইচ্ছা আমি লেখাপড়া করবো। কিন্তু অভাব অনটনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে আছে। তাই এখন নদীতে অনেক সময় বাবার সঙ্গে মাছ ধরে কোনমতে সংসার চালাই।' তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'খোঁজখবর সাগরের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খোট্টারচরের লোকজন যেহেতু প্রধান বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করেন। সেখানে আমাদের আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে। আর কারও প্রাণ হারাতে হবে না।' -এমএ |