বরগুনার তালতলীর বিভিন্ন চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি তৈরির কাজ। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জেলার এই দুই উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার নারী, পুরুষ শুঁটকি তৈরির জন্য ছোট ছোট ঘর তৈরি করছেন।
জেলে পল্লীগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শুঁটকি ব্যবসায়ী, মালিক ও শ্রমিকের আনাগোনা।
এ উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা চরের, শুঁটকি পল্লীতে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫ মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। এখানকার শুঁটকিতে কোন প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয়না বলে এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা একটু বেশিই থাকে।
মঙ্গলবার আশারচর শুঁটকি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, এ শুঁটকি পল্লীতে প্রায় ৬ শতাধিক জেলে ও মালিক পক্ষ শুঁটকি উৎপাদন করার লক্ষ্যে ছোট ছোট ২৪টি ঘর তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ দেখা যাচ্ছে তাদের ঘর উঠিয়ে শুঁটকি তৈরিতে মাছ রোদে শুকাচ্ছে। একের পর এক মাছ ধরা ট্রলার সমুদ্র থেকে আসছে।
এখানে প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ শুঁটকি জন্য রাখা হয়। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্ট্যা, পোপা অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রয়েছে চাহিদা। যেসব জেলেদের ঘর উঠানো হয়েছে তারা এই মাছগুলো বাঁশের মাচায় ও মাদুরে করে রোদে শুকাচ্ছেন।
এদিকে, বর্ষার কয়েক মাস ছাড়া বছরের বাকি সময়ে মোটামুটি হলেও সবচেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরি হয় শীতে। আর এ শুঁটকি মহালে কাজ করে জীবিকা চালান হাজারো শ্রমিক। সেখান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, পোটকা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্টা, চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনছেন। কেউ কেউ ওইসব মাছ পরিষ্কার করছেন।
একদল শুঁটকি মাচায় করে রোদে শুকাচ্ছেন আবার কেউ শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত রয়েছেন। এখানে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে চিংড়ি, লইট্টাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ একসঙ্গে কিনতে হয়। এমন এক ঝুড়ি মাছ বিক্রি হয় ৫শ থেকে ৭শ টাকায়। শুকানোর পর দুই/আড়াই কেজি শুঁটকি বিক্রি করে ২শ থেকে ৪শ টাকা লাভ থাকে।
এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শুঁটকি পল্লীগুলোতে ঘরের সংখ্যা বেড়েছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন। এছাড়াও এখানকার শুঁটকি পল্লীর মাছের গুড়ি সারাদেশে পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. রুপচাঁন হাওলাদার বলেন, 'জেলেরা কেউ কেউ ঘর উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। আবার কেউ ঘর উঠিয়ে এখন শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে। এখানকার শুঁটকি স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে তৈরি হওয়াতে চাহিদা বেশি। এই চরের শুঁটকি চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, 'শুঁটকি তৈরির শুরুর আগেই এখান থেকে সরকারি ভাবে এসব শুঁটকি বিদেশে রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। কারণ দেশ থেকে সরকারি ভাবে শুঁটকি রফতানির কোন ব্যবস্থা নেই।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'সরকারি ভাবে শুঁটকি রফতানির জন্য মৎস্য অধিদফতরে বেশ কয়েবার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। সরকারের চিন্তা আছে জেলার পাথরঘাটা ও তালতলীতে শুঁটকি উৎপাদন করার। তাই সরকারি ভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে শুঁটকি উৎপাদন করা হবে।
-এমএইচ/এমএ