For English Version
বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
হোম

অপরূপ রূপে কাঞ্চনজঙ্ঘা

Published : Thursday, 29 October, 2020 at 1:23 PM Count : 1094


দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। প্রতি বছর নভেম্বরে শুরুর দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও এবার অক্টোবরের শেষের দিকে দেখা মিলছে অপরুপ কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য।

বৃহস্পতিবার সকালে তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য।
তবে স্থানীয়দের দাবি, চলতি বছরের প্রথম দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।

অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। চোখের কাছে ভেসে থাকা হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ মায়াবী দৃশ্য দেখে অনেকেই মুগ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে পর্যটকরা এখানে আসা শুরু করেছেন।

পাসপোর্ট আর ভিসা ছাড়াই বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর সূর্যোদয়ের সময় দিনের প্রথম সূর্যকিরণের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসতে শুরু করেছেন তেঁতুলিয়ায়। ভোরে উষার সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর রোদ পড়ে সেই রোদ যেন ঠিকরে পড়ে পর্যটকের চোখে। হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার নানা রুপ দেখা যাচ্ছে। একই অঙ্গে অনেক রুপ এই কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রথমে কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা রং ধারণ করে। 

দূরবীন বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন নেই। দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার নানা রুপ লাবণ্য দেখতে পাওয়া যায়। যা প্রকৃতিপ্রেমীদের আরও মুগ্ধ করে তুলছে। উত্তরের আকাশে নয়নাভিরাম হিমালয় মূলত বরফে ঢাকা সাদা মেঘের মতোই। সেই সঙ্গে রয়েছে পিরামিডের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া। 

নানা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র (আকাশ পথে) ১১ কিলোমিটার। গত বছর বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট  দিয়ে প্রচুর মানুষ ভারতের এই পাহাড় দেখতে গেছেন। এবার করোনার কারণে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা নেপাল এবং সিকিমের সীমান্তে অবস্থিত। পৃথিবীর উচ্চতার দিক থেকে প্রথম সারির যে ৩টি পর্বত হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত সেই পর্বতমালায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। আর পর্বত কেটু’র উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২৫১ ফুট উচ্চতায় ২য় এবং ৩য় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। 

হিমালয় পর্বতের এই অংশটিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমল বলা হয়ে থাকে। এর পশ্চিমে তামূর নদী, উত্তরে লহনাক চু নদী এবং জংসংলা শৃঙ্গ এবং পূর্ব দিকে তিস্তা নদী অবস্থিত। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে মাসে বিৃটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন এবং জর্জ ব্যান্ড কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রথম আরোহণ করেন। ১৯৮৬ সালের ১১ জানুয়ারি জের্জি কুকুচজকা এবং ক্রিজটোভ উয়িলিকি শীতকালে প্রথম আরোহণ করেন।


তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণারের পাশেই হাবিব ষ্টোর। এ ষ্টোরের মালিক হাবিব জানান, বৃহস্পতিবার থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পেপার পত্রিকায় খবর ছড়িয়ে পড়লে পর্যটকদের ঢল নামবে এই তেঁতুলিয়ায়। 

তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করেই কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য চোখে পড়েছে। বন্ধু-বান্ধবদের জানিয়েছি। তারাও তেঁতুলিয়া আসছে।

তেঁতুলিয়া ময়নাগুড়ি টি এস্টেটের ব্যবস্থাপক সবুজ জানান, মাঝে মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। চা বাগান এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এখানেও অনেক পর্যটক ভীড় করেন। শীত কেবল নামছে। পুরোপুরি শীত নামলে পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা এলাকার বাসিন্দা নাইবুল ইসলাম জানান, তেঁতুলিয়া থেকে প্রতি বছর খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। নভেম্বর মাসে আমরা দেখতে পেতাম কিন্তু এবার অক্টোবর শেষের দিকে তথা আজ সকালে দেখতে পেলাম। 

তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, আজ খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। মেঘ পরিষ্কার থাকার কারণে বাইরে থেকে অনেক মানুষ দেখতে আসছে।

নীলফামারী ডিমলা থেকে তেঁতুলিয়ায় বেড়াতে আসা ইদ্রিস আলী জানান, আমি গত বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তেঁতুলিয়ায় এসে আর দেখতে পারিনি। আজ হঠাৎ তেঁতুলিয়ায় এসে দেখতে পেলাম। দেখে অনেক ভাল লাগলো। মনে হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছে গিয়ে দেখে আসলাম।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মেঘমুক্ত আকাশে রূপালি চকচকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকা এবং উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়াতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু জানান, প্রতি বছর তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য তেঁতুলিয়ায় এসে ভিড় জমায়। পিক কর্ণারে এসে বেশির ভাগ পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য  উপভোগ করেন। তাই উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পিকনিক কর্ণারকে নতুন করে সাজানো হয়েছে।

তেঁতুলিয়া ময়নাগুড়ি টি এস্টেটের ব্যবস্থাপক সবুজ জানান, মাঝে মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। চা বাগান এবং কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে এখানেও অনেক পর্যটক ভীড় করেন। শীত কেবল নামছে। পুরোপুরি শীত নামলে পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। 

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে পঞ্চগড় কিংবা তেঁতুলিয়া অথবা বাংলাবান্ধায় সরাসরি দূরপাল্লার কোচ (দিবারাত্রি) যাতায়াত করে। ঢাকা থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী বা নাবিল পরিবহনের বাস চলাচল করছে। এসব যানবাহনে চড়ে আপনি সহজেই তেঁতুলিয়ায় চলে আসতে পারেন। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে সৈয়দপুর পর্যন্ত আসতে পারেন। সৈয়দপুর থেকে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে করে যেতে পারেন তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা পর্যন্ত। যাত্রাপথে সময় ব্যয় হবে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫০০-১৫০০ টাকা। ট্রেনেও সরাসরি যাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে চলে আসতে পারেন পঞ্চগড়। পঞ্চগড় থেকে বাস, মাইক্রোবাস, কার বা যে কোন যানবাহনে তেঁতুলিয়া উপজেলায় যেতে পারবেন। তেঁতুলিয়রা যাওয়ার পথেই মাগুরমারী চৌরাস্তা নামক এলাকা থেকে তেঁতুলিয়া বা বাংলাবান্ধা পর্যন্ত গিয়ে দেখতে পারবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য। এছাড়া চা বাগান, মহারাজারদীঘি, ভিতরগড় প্রত্নস্থল, রকস মিউজিয়াম, আনন্দধারা, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বদেশ্বরী মন্দির, গোলকধাম মন্দিরসহ নানান প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। 
 
কোথায় থাকবেন কি খাবেন 
রাত যাপনের জন্য তেঁতুলিয়ায় সরকারি ৩টি ডাক বাংলোর পাশাপাশি দুয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ডাক বাংলোগুলোতে অবস্থান করতে হলে আপনাকে আগেভাগেই উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো থেকেই দেখতে পারবেন অপরূপ দৃশ্য-দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, হিমালয় এভারেস্ট কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘার। তেঁতুলিয়ায় ডাকবাংলো বা হোটেল না পেলে আপনাকে পঞ্চগড়ে গিয়ে থাকতে হবে। 

তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার হাবিব জানান, ৩টি ডাকবাংলোর ৯টি বেডে সবোর্চ্চ ২২ জন থাকতে পারেন। এখানে থাকার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। 


-এসআই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft