শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সর্বত্রই কুকুর-বিড়ালের বিচরণ, আতঙ্কে রোগী ও স্বজনরা
Published : Monday, 26 October, 2020 at 3:29 PM Count : 591
গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে কুকুর আর বিড়ালের অবাদ বিচরণ ও উপদ্রবসহ নানা অব্যস্থানার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আতঙ্কে আছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও। দীর্ঘদিন ধরে নানা অব্যবস্থাপনা থাকলেও ‘এসব দেখার যেন কেউ নেই’ বলছেন ভুক্তভোগিরা।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচ তলার টিকিট কাউন্টারে বেওয়ারিশ কুকুর ঘুর ঘুর করছে। রোগীদের কেউ কেউ ভয়ে কুকুরটিকে এড়িয়ে দূর দিয়ে চলাচল করছে। এর ঠিক কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালটির পুরানো ভবনের ভেতরে আবাসিক চিকিৎসকের পেছনে (বর্তমানে) মহিলা ওয়ার্ডের যাওয়ার সময় আরো একটি কুকুর দ্বিতীয় তলায় উঠার চেষ্টা করছে। কুকুরটির গায়ে এমন বড় এক ক্ষত রয়েছে, যা পঁচে গিয়ে তা থেকে দূগন্ধ ছড়াচ্ছে। কুকুরটিকে দেখে রোগীরা দোতলা ওঠার সাহস পাচ্ছে না, একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তারা। একপর্যায়ে কুকুরটি লোকজন দেখে দোতলায় না ওঠে সরে গিয়ে আরএমও’র কক্ষের পেছেন শুয়ে পড়ল। পরে অপেক্ষায় থাকা রোগী ও তার স্বজনরা দোতলা উঠেন।
এদিন নতুন ভবনের তৃতীয় তলার প্রশাসনিক বিভাগে ওঠতে গিয়ে দেখা গেল সিঁড়ির নিচতলা থেকে উপরের সব তলায় এবং সিঁড়িতে ময়লা জমে আছে। দোতলায় কেন্টিনের পশ্চিমপাশের দেয়ালে ও ছাঁদে মাকড়সার জাল ঝুলে রয়েছে, যেন কয়েক মাস ধরে তাতে ঝাঁড়ুর স্পর্শ পড়েনি। তিনতলায় ওঠে পরিচালকে ও উপ-পরিচালককে পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন জানালেন তারা ছুটিতে আছেন। তার কক্ষের পাশে সহকারি পরিচালকের কক্ষেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। পরে স্টোর অফিসার নাজিম উদ্দিনকে ওই ভবনের নিচতলায় অবস্থান করা কুকুর ও ময়লা দেখানো হলে তিনি এক নিরাপত্তাকর্মীকে ডেকে কিছুক্ষণ শাসিয়ে উপরে তার কক্ষে চলে যান। তিন তলায় প্রায় আধাঘন্টা অফিস প্রধান মো. নাজমুল হক ও স্টোর অফিসার নাজিম উদ্দিনদের সঙ্গে হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ে আলেচনার পর নিচে নেমে আসার সময়ও ওইসব ময়লা এবং কুকুর সেখানেই দেখা গেছে। এছাড়াও অপেক্ষমান রোগীদের বসারও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা কতটা বেহাল, তা এই চিত্র থেকে ভালোভাবেই আঁচ করা যায়। এভাবে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য রোগী নানা অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছেন।
গাজীপুর মহানগরের যোগীতলা মহল্লার নিবাসী সুমি আক্তার বলেন, আমার ১৮ মাসের শিশুটির চিকিৎসা নিতে এসে (পুরাতন ভবনের নিচ তলার উত্তর পাশে) ৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হয়। সে কারণে আমি পাঁচ দিন ধরে এ হাসপাতালে আছি। এ কদিনে আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর বিছানায় কিংবা খাটের নিচে শুয়ে বিড়াল। সুযোগ পেলেও রোগীদের খাবারের প্লেটের খাবার খেয়ে ফেলছে। সময় সময় তারা বমি এবং প্রস্রাব করে দিচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে হাসপাতালের কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। কেউ বিড়াল/কুকুর তাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অথচ কুকুর ও বিড়াল অনেক রোগের জীবাণু বহন করে। তা ছাড়া কুকুর জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস বহন করে। এ ছাড়া বিড়ালের আঁচড় থেকেও রোগ হতে পারে। হাসপাতালের যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনা। এমন সব অস্বাস্থ্যকর দৃশ্যের হরহামেশা দেখা মিলছে এ হাসপাতালে।
একই কথা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সোহানা (৫) ও সঙ্গে থাকা তার বড় ভাই ফারুক মিয়া। সোহানা চিকিৎসা নিতে ৬নং ওয়ার্ডের ২২নং বেডে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ এত সুন্দর হাসপাতালটি দেখারও যেন কেউ নেই।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান জানান, ৫০০শয্যার এ হাসপাতালে ৩৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে ৪২ জন আনসার রয়েছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকটে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করাতে হচ্ছে। ফলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। তবে বেড়াল-কুকুরে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীদের গাফিলতি রয়েছে। এ ব্যাপারে আনসার কমান্ডারকে শো’কজ করা হবে।
এফএ/এইচএস