হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা খুব কাছাকাছি চলে এলেও মানিকগঞ্জের বিপণী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়নি। এক প্রকার ক্রেতা শুণ্য অবস্থা বিরাজ করছে দোকানগুলোতে।
কিছু কিছু ক্রেতা এসে পোষাক বা প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করছেন তবে তা চোখে পড়ার মত নয়। দূর্গাপূজা উপলক্ষে দোকানীরা দেশি বিদেশি বিভিন্ন ধরনের শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবী, শাড়ি, থ্রি-পিস, শিশুদের কাপড় সাজিয়ে রাখলেও ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন দোকানীরা।
তবে করোনা ও বন্যার কারণে এ অবস্থা বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
সরেজমিনে মানিকগঞ্জ শহরের পৌর সুপার মার্কেট, কাজল শপিং কমপ্লেক্স, আইমনি শপিং সেন্টার, ডায়মন্ড প্লাজা, তৃপ্তি প্লাজা, মায়ের দোয়া মার্কেট, জিতেন্দ্র নিউ সিটি মার্কেটের দোকানগুলোতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
চাঁদের হাট শো-রুমের মালিক মো. রাজিব হাসান বলেন, করোনা ও বন্যার কারণে মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় জামা কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ের চাহিদা কমে গেছে। যে কারণে এবার ক্রেতার সংখ্যা কম। বর্তমানে বিক্রির অবস্থা ভালো না। আগের বছর এই সময়ে সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলতো বেচাকেনা। তবে আমরা আশাবাদী যেহেতু পূজার আরও কয়েক দিন বাকি আছে, হয়তো শেষ মুহূর্তে বিক্রি বাড়তে পারে।'
আমন্ত্রণ ফ্যাশনের মালিক মো. তুহিনুর রহমান বলেন, 'করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া কেউ জামা কাপড় কিনছেন না। আগে আমরা পূজা আসার এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতাম। বর্তমানে আমাদের প্রায় ৭০ ভাগ বিক্রি কমে গেছে। এখন আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে না পারছি ব্যবসা করতে, না পারছি ছাড়তে।'
আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের ম্যানেজার বলেন, 'আমরা দেশি বিদেশি শাড়ি, কাপড়, শার্ট ও প্যান্টের পিস বিক্রি করে থাকি। পূজোর সময় আগে আমরা দম ফেলার সময় পেতাম না। কিন্তু এবারই প্রথম ক্রেতা কখন আসবে তাদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি। কয়েকদিন ধরে গড়ে ২০/২৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। আর আগের বছর এই সময়ে প্রতিদিন বিক্রি হতো প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।'
পালকি ফ্যাশনের মালিক মো. আজাহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, 'আমরা মূলত কোয়ালিটি ফুল লেডিস আইটেম বিক্রি করে থাকি। করোনার আগে আমাদের রেগুলার বিক্রির চেয়ে বর্তমানের বিক্রি অনেক কম। বর্তমানে পূজার সময়ে গড়ে ৭/৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। যা দিয়ে শো-রুম ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল দেয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমন চলতে থাকলে এক সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে।'
কয়েকজন বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, করোনায় দীর্ঘ ৫/৬ মাস শো-রুম/দোকান বন্ধ থাকায় মালিকরা আমাদেরকে কোন বেতন দেয়নি। অনেককে আবার ছাঁটাইও করে দেয়া হয়েছে। আগে এই সময়ে আমাদের সেলস কমিশন দিতো। আর এখন বিক্রি না থাকায় আমাদের বেতনও কমে গেছে।
মানিকগঞ্জ বস্ত্র মালিক সমিতির সভাপতি বাদল সাহা বলেন, 'অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতার সংখ্যা কম। করোনা ও বন্যার কারণে এমন দশা হয়েছে। এবারের পূজার বাজারে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা কিছুটা বাড়তে পারে।'
-এএ/এমএ