For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ দূর্গাপূজার প্রবর্তক

Published : Sunday, 18 October, 2020 at 5:55 PM Count : 634

রাজা কংস নারায়ণের মন্দিরেই প্রথম দূর্গাপূজা উতযাপিত হয়েছিলো বলে জনস্রুতি রয়েছে।  মন্দিরটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির।  রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুর ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে (৮৮৭ বঙ্গাব্দ) এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে অসুরের অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষার পেতেই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং পূজা দেওয়া হয়েছিলো যা পরবর্তীতে এই উপমহাদেশে সার্বজনীন শারদীয় দূর্গাপূজার জন্ম দেয়। উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে দূর্গাউৎসব হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। 

তাহেরপুরের এই প্রাচীন মন্দির বারনই নদীর তীরে অবস্থিত। রাজশাহী শহর থেকে বাস ও স্থানীয় যানবাহন যোগে তাহেরপুর যাওয়ার সু-ব্যবস্থা আছে। রাজশাহী শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে এটির অবস্থান।

ত্রেতাযুগে স্বয়ং ভগবান রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য অকালে এই পূজা করেছিলেন। আর কলিযুগে রাজা কংস নারায়ণ আধুনিক ভাবে উৎসবের ঘটায় এই পূজার আয়োজন করেন। মহাযজ্ঞের মাত্রা ছাড়িয়ে তা আজ সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। 

তাহিরপুর রাজবংশ বাংলাদেশের প্রাচীন রাজবংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে জায়গাটি বাগমারা উপজেলার একটি পৌরসভা। তবে কালক্রমে তাহিরপুর নামটি তাহেরপুর বলে উচ্চারিত হচ্ছে।
এই রাজবংশের আদিপুরুষ ছিলেন মৌনভট্ট। আর বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামন্ত রাজা ছিলেন ইতিহাসখ্যাত কংস নারায়ণ রায়। তিনি সুলতানি আমলে চট্টগ্রামে মগ দমনে বীরের ভূমিকা পালন করেন। পাঠান আমলে কিছুদিন ফৌজদারের দায়িত্বও পালন করেন। মোগল আমলে এসে কিছুকাল বাংলা-বিহারের অস্থায়ী দেওয়ান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ই তিনি রাজা উপাধি পান। 

বাংলা অনেকটা মোগলদের নিয়ন্ত্রণে এলে সম্রাট আকবর রাজা কংস নারায়ণকে সুবেবাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। কিন্তু দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তাহেরপুরে ফিরে ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সমসাময়িক বাংলার হিন্দু সমাজে তিনি চিরভাস্বর হয়ে থাকার মানসে এক মহাযজ্ঞ সাধন করতে শুরু করেন। এই লক্ষ্যে তাঁর পরগণার সব শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের দরবারে আহ্বান করে তাঁদের মত চাইলেন।

তাঁর মনোবাসনার কথা শুনে পন্ডিত রমেশ শাস্ত্রী বললেন, তোমার পক্ষে দুর্গোৎসব ভিন্ন অন্য কোনো মহাযজ্ঞ উপযুক্ত নাই। এই যজ্ঞ সকল যুগে সকল জাতীয় লোকেই করতে পারে এবং এক যজ্ঞেই সব যজ্ঞের ফল লাভ হয়। সমাগত সব পন্ডিত রমেশ শান্ত্রীর এই মতে সমর্থন দিলেন।

ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজা কংস নারায়ণ সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। উৎসবটি হয়েছিল বারনই নদের পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের দুর্গামন্দিরে। আজও বাঙালির সর্বজনীন দুর্গোৎসবে সেই পদ্ধতিই অনুসৃত হচ্ছে। 

তবে কংস নারায়ণের পরবর্তী চতুর্থ পুরুষ লক্ষ্মী নারায়ণের সময় সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছোট ভাই বাংলার সুবেদার শাহ সুজা বারনই নদের পূর্ব তীরে অবস্থিত রাজা কংসের প্রাসাদ ধ্বংস করে দিয়ে যান।

পরে অবশ্য লক্ষ্মী নারায়ণ আওরঙ্গজেবের অনুকম্পায় নদীর পশ্চিম তীরে একটি পরগনা লাভ করেন। সেখানেই রাজবাড়ি নির্মাণ করে রাজত্ব করেন। ১৮৬২ সালে রাজা বীরেশ্বর রায়ের স্ত্রী রানী জয় সুন্দরী রাজবাড়ির সঙ্গে একটি দুর্গামন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের নামফলকটি বর্তমানে রাজশাহীতে অবস্থিত উপমহাদেশের প্রথম যাদুঘর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

রাজবংশের শেষ রাজা ছিলেন শিবশেখরেশ্বর। তাঁর বাবা শশী শেখরেশ্বরের সময় থেকে রাজারা কলকাতায় গিয়ে থাকতেন। শুধু পূজার সময় আসতেন। ১৯২৭ সালে শেষবারের মতো তিনি তাহেরপুরে এসেছিলেন। এরপর তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়।

একসময় রাজবাড়ির এই মন্দিরটি প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালে রাজবাড়িতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজবাড়ির ভেতর থেকে মন্দিরে যাওয়ার ফটকটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এএইচ/এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft