For English Version
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
হোম

এক সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মে অভিযোগ

Published : Tuesday, 29 September, 2020 at 5:57 PM Count : 948

ভুয়া স্মারকে পদায়ন, বদলি ও ভুয়া ভাউচারে বিল উত্তোলনসহ প্রশাসনিক ও আর্থিক নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে জয়পুরহাটের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ছুটি জনিত অনুপস্থিতি এবং যোগদানের পরও ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব নিয়ে তিনি এসব অপকর্ম করেন। মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে বিধি বহির্ভুতভাবে শিক্ষক পদায়ন ও বদলি করায় ভুক্তভোগী শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও হয়রানীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।  

জানা গেছে, দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এস এম তৌফিকুজ্জামান গত ২০ জানুয়ারি   চিকিৎসার জন্য ৪৫ দিনের ছুটি নিয়ে ভারতে যান। তার অনুপস্থিতিতে দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে জেষ্ঠ্য সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলামকে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পন করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি অফিস আদেশ প্রদান করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নার্গিস সাজেদা সুলতানা। একই সাথে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদানের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ভারপ্রাপ্তের এ আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে মর্মেও জানানো হয় ওই আদেশে। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান ২৪ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগদান করলেও সাইফুল ইসলাম সেই থেকেই অবৈধভাবে অফিসের প্রশাসনিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। 

ভুয়া স্মারক ব্যবহার করে শিক্ষকদের অবৈধভাবে খেয়াল খুশিমত পদায়ন, বদলী ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অগ্রগায়ন ও লিপিবদ্ধকরণ সহ একের পর এক অফিস আদেশ জারি করছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা কর্মকর্তা হিসেবে।  
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলায় সদ্য পদায়ন করা সহকারী শিক্ষকদের দুইদিন ব্যাপী ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় জয়পুরহাটের খঞ্জনপুর পিটিআই মিলনায়তনে। যেখানে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থাকায় বিনা খরচে কর্মশালা সম্পন্ন হলেও অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা লাভের বিল ভাউচারে ভেন্যু দেখানো হয়েছে জয়পুরহাট পৌর কমিউনিটি সেন্টারে। অথচ কর্তৃপক্ষ জানায় প্রাথমিক শিক্ষকদের ওরিয়েন্টেশন কর্মশালার জন্য তাদের পৌর কমিউনিটি সেন্টার তারা ভাড়া দেননি। কিন্তু ভুয়া ভাউচারে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগদানের পর সাইফুল ইসলামের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ হয়। কিন্তু সাইফুল ইসলাম দুই দিনের ওই ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় ভ্যাট সহ এক লাখ ৮৩ হাজার ৪২৫ টাকা খরচ দেখিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি সমুদয় বিল তুলে নিয়েছেন। 

অভিযোগে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়ে সাইফুল ইসলাম সদ্য চাকুরি পাওয়া জেলায় ৯১ জন সহকারি  শিক্ষকের  পদায়নে অফিস আদেশ প্রদান করেন গত ১৮ ফেব্রুয়ারী। পরে সেই আদেশ বাতিল না করে খেয়ালখুশি মত পদায়নের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শিক্ষকদের কাছ থেকে। ওই আদেশে সহকারী শিক্ষক পদে সদ্য চাকরি পাওয়া ক্ষেতলাল উপজেলার হাটশহর গ্রামের স্বপন কুমারকে আক্কেলপুর উপজেলার জাফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করেন। পরের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ভুয়া স্মারকে ওই শিক্ষককেই আবার জয়পুরহাট সদর উপজেলার বাকিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করেন। সেখানে নিজ উপজেলায় প্রত্যাবর্তনে জুন মাসের ১৪ তারিখে ক্ষেতলালের বারইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসরজনিত শুন্যপদে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ঘুষ নিয়ে আগের আদেশ বাতিল না করে জুন মাসের ১১ তারিখে শিক্ষক স্বপন কুমারকে যোগদান করা বিদ্যালয়ে স্থায়ী করেন। যে আদেশে কোন স্মারক নম্বর দেওয়া নেই। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপিস্থিত থাকার পরও এ ধরণের আদেশ সম্পূর্ণ অবৈধ। একইভাবে দুই বছর আগে যোগদান করা জেলার পাঁচবিবি উপজেলার সদ্য জাতীয়করণ করা দোঘড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা বেগমকে আবেদন ছাড়াই ২২ কিলোমিটার দুরে মোলান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করেন। 

এ বিষয়ে শিক্ষক ফারজানা বেগম সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি বদলীর জন্য কোন আবেদন করিনি। আমার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। আমি দেইনি, তাই আমাকে বাড়ি থেকে ২২ কিলোমিটার দুরে অন্যায়ভাবে বদলী করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সদ্য জাতীয়করনকৃত দোঘড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মেহেদি হাসানকে স্বপদে বহাল রাখতে   ফারজানা বেগমকে অন্যায়ভাবে বদলী করা হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ।  

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারি আব্দুল হাকিম বলেন, সহাকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম স্যার তাদের কোন কথা শুনতেন না। আপত্তি জানালেও জোর করে তার অবৈধ আদেশ পত্রে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করতেন। তিনি বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান স্যার গত ২৩ আগষ্ট একজন শিক্ষকের পিআরএল মঞ্জুর করেন। যার স্মারক নম্বর ৬০৪। যেটি রেজিষ্টারে তালিকাভুক্ত আছে। অথচ ওই একই স্মারক ও তারিখ দিয়ে সাইফুল স্যার অন্য এক শিক্ষকের স্নাতক পাশের সনদ সার্ভিস বহিতে অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। যে আদেশে তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। 

অসুস্থতা জনিত ছুটি শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান যোগদান করার পরও সাইফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে অন্তত ১৫ জন শিক্ষককে অবৈধ আদেশে বদলি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার অধিকাংশ শিক্ষকরা সাইফুল ইসলামের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা সাইফুল ইসলামের ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়মের সার্বিক কর্মকাণ্ড তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। 

নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে সমাজে হেয় করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে এমন উল্লেখ করে সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে দি ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ‘জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদান করলেও তার অসুস্থতার কারণে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। আমি অনিয়ম করলাম আর আমার উপরের কর্মকর্তা তাহলে কি করলেন উল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি। অনুমতি ছাড়া জেলার বাইরে অফিসের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোন নিয়ম নাই। তারপরেও রাজশাহীতে গাড়ি গিয়ে দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মেরামতের টাকা কি দিয়েছে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন সাইফুল ইসলাম।  
 
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তৌফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অসুস্থতা জনিত কারণে ছুটি ভোগ করার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারী যোগদান করেছি। কাজেই আমি যোগদানের পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে অন্য কারো দায়িত্বে থাকার কথা নয়। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান এস এম তৌফিকুজ্জামান।   

এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft