For English Version
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
হোম

বর্ষাকালে একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

Published : Tuesday, 29 September, 2020 at 3:02 PM Count : 730

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সদর ইউনিয়নের অবহেলিত একটি গ্রাম রাণীপুরা। গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদীর একটি খরস্রোতা শাখা। শুকনো মৌসুমে নদী দিয়ে হেঁটে পারাপার সম্ভব হলেও বর্ষাকালে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

তাছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই দুই পাড়ে দীর্ঘ মেঠো পথে পানি জমে যায়। তাই চলাচলের সুবিধার্থে স্থানীয়দের অনুদান, গ্রামবাসীদের চাঁদা ও বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এক হাজার ৩৩ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘতম এই বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণে বিভিন্ন উৎস থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এখন মানসিক চাপে রয়েছেন এর উদ্যোক্তারা।

ঋণ পরিশোধের জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাণীপুরা গ্রামটির ভেতর দিয়ে যাওয়া পায়ে চলা রাস্তায় শুকনো মৌসুমে বেলকুচি সদর ইউনিয়নের রানীপুরা, দেলুয়া, মনতলা, বেলকুচির চর, মুলকান্দী, কালাই, আফজালপুর, হাট বয়ড়া, ছোট বেড়া খারুয়া, দশখাদাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক মানুষ যাতায়াত করেন। নদী ঘেঁষা এই গ্রামের অধিকাংশ জায়গা বর্ষায় পানিতে ডুবে গেলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। সেই সঙ্গে মানুষের যাতায়াতেও বিঘ্ন ঘটে। বর্ষার সময় শিক্ষার্থীদের গামছা পরে মাথায় বই নিয়ে গলা পানিতে হেঁটে হেঁটে, কোথাও কোথাও আবার সাঁতরে স্কুলে যেতে হয়। কৃষিপণ্য ও রোগী পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়াও কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি তো রয়েছেই।
মানুষের এই ভোগান্তি ও কষ্টের বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে গ্রামের নুরুল ইসলাম, নূর আলম শেখ, শহিদুল ইসলাম ও আব্দুল শেখকে। তাদের ভাবনাকে সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসেন করোনার কারণে বাড়িতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আনিসুর রহমান। পরে তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে পুরো গ্রামবাসী। শুরু হয় সাঁকো নির্মাণ।

এ বিষয়ে উদ্যোক্তা আনিসুর রহমান বলেন, 'যাতায়াতের কষ্টের কথা বিবেচনা করে গ্রামবাসীর মতামত নিয়ে গত এপ্রিল মাসের শুরুতেই কাজ শুরু করা হয়। ৭০টি পরিবারের নিকট থেকে নেয়া হয় ৩০০ টাকা করে চাঁদা। স্থানীয় যুবক নুরুল ইসলাম দেন ৫ হাজার টাকা। এক হাজারেরও অধিক বাঁশ, ৮৫ সেফটি কাঠ, দুই মণ ১৫ কেজি রশি, এক মণ ২৫ কেজি তারকাঁটা ও ৪০০ জন শ্রমিক নিয়ে নির্মিত সাঁকোটিতে খরচ হয়েছে ৩ লক্ষাধিক টাকা। এ জন্য গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন উৎস থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়ে বাকি রাখা, ঋণ গ্রহণ এবং ছোট খাটো মেরামত বাবদ আরও এক লক্ষ ৮ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের পক্ষে কোন ভাবেই এই টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।'

স্থায়ীয় আব্দুল্লাহ শেখ ও শহিদুল ইসলাম বলেন, 'সাঁকো নির্মাণ করতে গ্রামে বসবাসকারী প্রতিটি বাড়ি থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়েছে। সমাজসেবক নুরুল ইসলাম পারভেজসহ এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নিকট থেকে আর্থিক সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। সাঁকোটি নির্মাণে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ব্যয় করা হয়েছে। দীর্ঘতম বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণে বিভিন্ন উৎস থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাদের এ ঋণ পরিশোধে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সাঁকোর স্থলে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে মো. নুরুল ইসলাম পারভেজ বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। কিন্তু রাণীপুরা গ্রামের মানুষ এখনও সে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। তাই আমাদের এলাকার হাজার হাজার মানুষের কথা বিবেচনা করে এখানে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘব করবেন বলে আমরা আশাবাদী।'

বেলকুচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোলেমান হোসেন বলেন, 'গ্রামবাসীর উদ্যোগে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু টাকা ঋণও আছে উদ্যোক্তাদের। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে সেখানে একটি সেতু বরাদ্দের জন্য উপজেলার মাসিক আলোচনা সভায় বিষয়টি জোরালো ভাবে উত্থাপন করা হয়েছে।'

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, 'গ্রামবাসীর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি বৃহৎ সাঁকো তৈরি করেছে গ্রামবাসী। পণ্য পরিবহনের জন্য এখানে একটি সেতু প্রয়োজন। আড়াইশ থেকে তিনশ মিটার প্রশস্ত হওয়ায় সেতুটি উপজেলা পরিষদ থেকে করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের পর্যাপ্ত বাজেটও নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি উপজেলার মাসিক মিটিংয়েও আলোচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে একটি প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সাঁকো নির্মাণে উদ্যোক্তাদের উপজেলা পরিষদ থেকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।'

-এবি/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft