For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

দেশে বর্জ্য পানিতে মিলেছে করোনা ভাইরাসের জীন

Published : Tuesday, 22 September, 2020 at 4:36 PM Count : 795

দেশের বর্জ্য পানিতে করোনা ভাইরাসের জন্য দায়ী সার্স কোভ-২ ভাইরাসের জীনগত উপাদান পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্যের প্রমাণ মিলেছে।

গবেষকগণ চলতি বছরের ২০ জুলাই থেকে ২৯ অগাস্ট দেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত কোভিড আইসোলেশন কেন্দ্রের আশপাশের ড্রেন, নর্দমা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও শৌচাগারের সঞ্চালন লাইন থেকে বর্জ্য পানির নমুনা সংগ্রহ সংগ্রহ করেন। আর সংগৃহীত নমুনা থেকে ‘ওআরএফ১ এবি’ ও ‘এন প্রোটিন’ জিনসহ করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি সফল ভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

গবেষকরা জানান, বর্জ্য পানি একটি যন্ত্রচালিত ছাঁকনি মেশিনের সাহায্যে আগে ছেঁকে নেয়া হয়। তখন ময়লা নিচে চলে যায়। ওপরের পানি আলাদা করা হয়। ওই প্রক্রিয়ায় পানি আবার ছাঁকলে ভাইরাসগুলো সব নিচে চলে যায়। নোবিপ্রবিতে আরটিপিসিআর পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই তলানি থেকে করোনা শনাক্ত করেছেন তারা।

গবেষকরা আরও জানান, সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণে ও ওয়েস্ট ওয়াটার (বর্জ্য পানি) ট্রিটমেন্ট কাজে ড্রেনের পানিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। তাই নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে করোনা রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন কেন্দ্রের নিকট ড্রেনের পানিকে নমুনা হিসেবে প্রাধান্য দেন গবেষক দলটি। আর দেশের নর্দমা ও ড্রেনের পানিতে কোভ-২ আরএনএ শনাক্তকরণের এটাই প্রথম সফল প্রচেষ্টা বলে দাবি তাদের।
গবেষণা প্রতিবেদনটির নতুন দিক হলো এখানে আইসোলেশন কেন্দ্রের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক কোভিড রোগীর ‘জেনেটিক লোডকে’ তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীতে এসময়ে সম্পাদিত অনেক গবেষণার মতো এর মাধ্যমে কোনো দেশে কিংবা এর নির্দিষ্ট কোনো শহরে কি পরিমাণে কোভিড আক্রান্ত রোগী রয়েছে তা অনুমান সম্ভব। করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর শরীরে কোনও উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না, বা সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেও তাদের হাসপাতালে না রেখে বাড়িতে রাখা হচ্ছে। সে কারণে নর্দমার বর্জ্যপানি থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনাও বাড়ছে। একটি এলাকায় করোনা আছে কিনা, তা জানতে ঐ এলাকার সম্ভাব্য রোগীদের উপর পরীক্ষার আগে সেখানকার ড্রেনের পানি পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে। এ গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রাথমিক সাফল্য এখানেই। 

এবিষয়ে প্রতিথযশা ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টাইনে কোভিড-১৯ এর অস্তিত্বের প্রমাণ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। আমাদের দেশে ড্রেনের পানি তথা বর্জ্যপানিতে কোভিড এর উপস্থিতি প্রমাণে গবেষকদের নতুন পদ্ধতিটি ভবিষ্যতে দেশে কোরোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গবেষকদের এমন উদ্যোগকে দেশের ড্রেন ও নর্দমার পানিকে নজরদারির আওতায় এনে কার্যকর ওয়েস্টওয়াটার ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন বলে মনে করছেন।

নোবিপ্রবি’র অধ্যাপক ও গবেষক দলের প্রধান ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, যেহেতু সংক্রমিত কিংবা সংক্রমিত নয় উভয় ব্যক্তির শরীর থেকে নির্গত মলমূত্রের মাধ্যমেই ভাইরাস ছড়ায়। সুতরাং দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ এবং সংক্রমণের উঠা নামা সঠিকভাবে মূল্যায়নে বর্জ্যপানি নিরীক্ষণ একটি ফলপ্রসু পদ্ধতি। আমাদের সংগৃহিত অনেক কোভিড-১৯ রোগীর মলে ‘ওআরএফ১ এবি’ এবং ‘এন প্রোটিন’ জিনসহ বেশ কয়েকটি জিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ফলে ড্রেন কিংবা নর্দমার বর্জ্যপানি পরীক্ষা করে কোনো এলাকায় করোনা আছে কিনা, তা জানা যেতে পারে। 

গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- নোবিপ্রবির অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, সহকারী অধ্যাপক ফয়সাল হোসেন, মো. শাহাদাত হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মো. মাইন উদ্দিন এবং নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ মাকসুদ হোসেন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হেল্থ এ্যান্ড লাইফ সায়েন্সের ডিন প্রফেসর হাসান মাহমুদ রেজা ও অধ্যাপক মো. জাকারিয়া, পিএইচডি।

এ গবেষণা কার্যক্রমে সার্বিকভাবে যুক্ত আছেন নোবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড: মো. দিদার-উল-আলম। তিনি বলেন, ড্রেনের পানি তথা বর্জ্যপানিতে কোভিডের উপস্থিতি প্রমাণে গবেষকদের নতুন পদ্ধতিটি আমাকে আনন্দিত ও উৎসাহিত করেছে। আমি আশা করি এটি দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের একটি নতুন পথের সন্ধান দিবে। 

তিনি আরো বলেন, দেশে মার্চে করোনা মহামারী শুরু হয়। পরে ১১ মে, ২০২০ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণায়ের অনুমোদনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক অনুদানে নোবিপ্রবি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে ‘আরটিপিসিআর’ মেশিনে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কার্যক্রম চালু করা হয়। করোনা ল্যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্টাফ এবং শিক্ষার্থীরা নিরলস কাজ করছে। ইতোমধ্যে এ ল্যাবে নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার ১০ উপজেলার একুশ হাজার নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। 

এমআরএম/এইচএস


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft