সড়কের ওপর গর্তের সারি। খানাখন্দে ভরা ব্যস্তময় সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা।
প্রায় এক বছর ধরে পঞ্চগড়-ভাউলাগঞ্জ সড়কে এভাবেই যাতায়াত করছেন পথচারীরা। কিন্তু সড়কটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের দাবি, সংস্কার কাজে অনিয়ম ও ধীরগতির কারণে কাজ শেষ হতে না হতেই সড়ক আবারও খানাখন্দে ভরে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে পঞ্চগড়-ভাউলাগঞ্জ সড়কের বোদা জিসি টু ভাউলাগঞ্জ জিসি সড়কের প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়। প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টাকায় কাজটি করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রইনকো ট্রেডার্স। দায়সারা ভাবে কাজ শেষ করায় সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও খানাখন্দে ভরে যায় সড়কটির ওই অংশে।
তারপর থেকেই পঞ্চগড়ের অন্যতম ব্যস্তময় এই সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। ইজিবাইক উল্টে যাওয়ার ঘটনা নিত্যদিনের। প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ নিয়ে প্রায় লাখো মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছেন। সড়কটিতে এখন পাঁয়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সড়কের কাঁদা পানিতে কাপড় চোপড়ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাতে চলাচল করা আরও বিপদজনক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় সড়কটি টিকছে না। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরও তেমন কোন নজরদারি নেই। তাই এক বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি।
এদিকে, গত বছরের অগাস্টে ওই সড়কটির কালিয়াগঞ্জ থেকে বড়শশী পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়। ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএইচ কর্পোরেশন এন্ড মীম ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এক বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের অগাস্টে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি তারা।
এছাড়া ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে দায়সারা ভাবে কাজ করার অভিযোগও রয়েছে। সড়কটির একাধিক স্থানে পিচ ঢালাইয়ে পর ফাঁটলের সৃষ্টি হয়েছে। এই অংশটুকুর সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে পথচারীদের দুর্ভোগের পাল্লা আরও ভারী হয়েছে।
ভাউলাগঞ্জ থেকে জেলা সদরের হাট-বাজার, অফিস, আদালতে যেতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। সময় লাগছে দ্বিগুণ। তারপরও ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছেন তারা। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
একইসঙ্গে কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
টোকরাভাসা এলাকার রাশেদুজ্জামান প্রধান বলেন, 'রাস্তাটি কখনো ঠিক পেলাম না। এক পাশে কাজ হচ্ছে আরেক পাশে গর্তের সারি। এক বছর ধরে ঠিকাদার গোজামিল দিয়ে কাজ করছে। আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কারও কোন নজরদারি নেই সড়কটি নিয়ে।'
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আকবর হোসেন বলেন, 'এক বছর ধরে সড়কটিতে ঠিকাদার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ করছে। এত সময় লাগার কথা নয়। যেটুকু অংশ কার্পেটিং করা হয়েছে তা এখনই ফেটে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে সড়কটির যে অংশ সংস্কার করা হয়েছিল তাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যায়। এখন পুরো সড়ক জুড়ে সারি সারি গর্ত।'
সড়কে কাজের সময় তদারকি জোরদার করার দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে অনিয়মে জড়িত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি তোলেন।
দামড়াদিঘী এলাকার হাসান আলী বলেন, 'সড়কটির এতো বাজে অবস্থা যে হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর। নতুন কাপড় পড়ে বের হলে কাঁদা দিয়ে সব কাপড় চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ঠিকাদার কাজও করছে ধীরগতিতে। ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় কিছু বলাও যায় না।'
ইজিবাইক চালক রেজাউল সরকার বলেন, 'এক বছর ধরে খুব কষ্ট করে যাতায়াত করছি। কালীয়াগঞ্জ বাজার থেকে টোকরাভাসা পর্যন্ত খানাখন্দে ভরা। বড় বড় গর্ত। মাঝে মধ্যে গাড়ি উল্টে যায়। আধা ঘন্টার রাস্তা যেতে এক ঘন্টা লেগে যায়। কবে ঠিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই।'
পথচারী আবু তাহের বলেন, 'পঞ্চগড় থেকে এই সড়ক ধরে আমি নিয়মিত যাতায়াত করি। সড়কটি সংস্কারের কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও আগের মতো হয়ে যায়। কিভাবে সংস্কার করে বুঝতে পারি না। খানাখন্দ থাকায় আমার চোখের সামনেই অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। রাতের বেলা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা বিপদজনক।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কেউ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুজামান কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না দাবি করে বলেন, 'বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমরাই ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। এছাড়া ওভারলোড নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় সড়কটি অল্পতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে সড়কটির খানাখন্দে ভরা অংশটুকু এ বছরেই মেরামত করে দেয়া হবে।'
-এমএ