For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

সীমান্ত এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে অফলাইনে পাঠদান

Published : Thursday, 17 September, 2020 at 3:24 PM Count : 745

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সীমান্ত এলাকা সোনাপাতিলা। এলাকায় নেই তেমন নেটওয়ার্ক সুবিধা। অনলাইনে ক্লাশ করার সুযোগ মেলেনা ওই গ্রামের শিক্ষার্থীদের।

তাই বাড়ির পাশের হাট-বাজারে দোকান থেকে দেশের জনপ্রিয় শিক্ষকদের ক্লাশের ভিডিও মেমরি কার্ডে নিয়ে ঘরে বসেই সুবিধামতো ক্লাশ করছে করোনায় পিছিয়ে পড়া এসব প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা।

বিনা খরচের এই অভিনব শিক্ষা কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে 'অফলাইন পাঠদান' কার্যক্রম। আটোয়ারী উপজেলার কিছু উদ্যোমী তরুণ এর উদ্যোক্তা।

করোনা পরিস্থিতিতে সোনাপাতিলার মতো পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকাগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অফলাইন পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম। নেটওয়ার্ক না থাকা এসব সীমান্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এই পাঠদান পদ্ধতি।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজ ও প্রাইভেটসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ভেঙে পড়েছে পঞ্চগড়ের শিক্ষা ব্যবস্থা। বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সরকারি বেরসরকারি ভাবে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু হলেও পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক না থাকায় এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার শিক্ষার্থীরা।

আটোয়ারীর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুল করিমের নেতৃত্বে আব্দুস সোবহানসহ বেশ কয়েকজন তরুণ মিলে গড়ে তোলেন এআর আইটি সল্যুশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা নিজেরাই অনলাইন থেকে জনপ্রিয় শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানের ভিডিও ডাউনলোড করে বিনামূল্যে তা শিক্ষার্থীদের মেমরি কার্ডে দিতে শুরু করেন। যোগাযোগ করেন প্রান্তিক এলাকার শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গেও।

তারা উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি হাট-বাজারের মেমরি লোডের দোকানগুলোতে বিষয়ভিত্তিক ক্লাশগুলোর ভিডিও কন্টেন্ট সরবরাহ করেন। সেই ভিডিও মেমরি কার্ডে নিয়ে ঘরে বসেই সুযোগ মতো মোবাইলে ক্লাশ করছে শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ মেমরি কার্ড স্মার্ট টিভিতেও যুক্ত করে ক্লাশ দেখছেন এবং তা নোট করে নিচ্ছেন। যাদের স্মার্ট ফোন বা টিভি নেই তারা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ক্লাশগুলো দেখছেন। একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করছেন ক্লাশের ভিডিওগুলো।

বিনা খরচে এই পদ্ধতিতে পড়াশোনার ধারণা প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ঘরে বসেই ক্লাশ করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। এমনকি একবার না বুঝলে বার বার রিপিট করে দেখারও সুযোগ রয়েছে এই পদ্ধতিতে।

শুধু প্রান্তিক এলাকা নয় এখন উপজেলার সর্বত্রই অফলাইন মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন এই ধারণায় বদলে গেছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পদ্ধতিও।

এভাবে পাঠদান চলমান থাকলে কমে আসবে কোচিং ও প্রাইভেটের প্রবণতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি শিক্ষাদানে ইতিবাচন পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন শিক্ষক ও অভিভাবকরাও।

সোনাপাতিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জেসমিন আক্তার জানায়, 'আমাদের এলাকা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে তেমন নেটওয়ার্ক সুুবিধা নেই। তাই আমরা অনলাইনে ক্লাশ করতে পারি না। অফলাইনে ক্লাশের এই ধারণা করোনাকালে আমাদের লেখাপড়ায় গতি এনেছে। মেমরি কার্ড লোডের দোকান থেকে আমরা ক্লাশগুলো লোড করে বাড়িতে এনে সুবিধা মতো সময়ে দেখে নিতে পারছি। একবারে বুঝতে না পারলে আবার রিপিট করে দেখছি। এমনকি এতে আমাদের কোন খরচও হচ্ছে না।'

ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ইসাহাক আলী জানায়, 'বাড়ির কাছের কম্পিউটারের দোকান থেকে আমরা বিষয়ভিত্তিক ক্লাশের ভিডিও পাচ্ছি। যার মোবাইল নেই সে আমাদের সঙ্গে এসে একত্রে ক্লাশগুলো দেখতে পারছে। কেউ আবার শেয়ার করে নিচ্ছে। এতে আমাদের কোন খরচ হচ্ছে না।'

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, 'অফলাইন পদ্ধতিটি বিশেষ করে এই পরিস্থিতিতে আমাদের সীমান্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমরা শিক্ষার্থীদের ভিডিও কন্টেন্ট নিয়ে পড়ালেখা করার বিষয়ে উৎসাহ জোগাচ্ছি।'

আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী কাশফিয়া জামান শিফা জানায়, 'করোনায় আমাদের লেখাপড়ায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তক বইয়ে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা শিক্ষকদের সহায়তা ছাড়া বুঝতে পারি না। এই বিষয়গুলো আমরা অফলাইনে ক্লাশ করে সহজেই বুঝতে পারছি। ভিডিওগুলোতে আমাদের পাঠপুস্তকের প্রতিটি বিষয় খুব নিখুঁত ভাবে ও আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করা হয়।'

ওই গ্রামের অভিভাবক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'করোনায় ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ায় ঝিমিয়ে পড়েছিল। অফলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আবার তারা লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছে। বাজার থেকে আমি মেমরি কার্ডে ক্লাশের ভিডিও এনে দেই। আমার ছেলে সেটি স্মার্ট টিভির মাধ্যমে দেখে দেখে নোট করে নেয়।'

অফলাইন পাঠদান কার্যক্রমের উদ্যোক্তা আব্দুস সোবহান বলেন, 'পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সমানতালে এগিয়ে নেয়ার জন্যই আমরা এই উদ্যোগ নেই। শুরুতে শুধুমাত্র মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ভিডিও সংগ্রহ ও বিতরণ করা হলেও আমরা ক্রমান্বয়ে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও এই সেবা চালু করবো। বিনামূল্যে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছি।'

এআর আইটি সল্যুশনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুল করিম বলেন, 'আমাদের প্রত্যাশা এই অফলাইন কার্যক্রম শুধু করোনা পরিস্থিতিতেই নয় সব সময়ের জন্য সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। এতে করে প্রাইভেট ও কোচিংয়ের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে। প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীরাও সমান তালে এগিয়ে যাবে।'

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার বলেন, 'আসলেই এই পদ্ধতিতে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। এটি পুরো জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।'
 
-এসআইএস/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft