মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (সরকারি) পুকুরে উৎপাদিত মাছ লুট ও জীর্ণ পুরাতন পরিষদ ভবন জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে ২ নং ভুনবীর ইউনিয়নের সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান চেরাগ আলীর দুই পুত্র কাওসার আহমেদ ও ফয়সাল আহমদের বিরুদ্ধে।
সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মিলন শীল অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগষ্ট দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেআইনি ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে প্রবেশ করে, ইউপি সদস্য ও সদস্যা, সাতগাঁও বাগানের পঞ্চায়েতের সম্মুখ হতে পুকুর থেকে ধরাকৃত মাছ (প্রায় ৬ মণ) যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২৪ হাজার টাকা জোর করে লুট নিয়ে যায় ফয়সাল ও আরো কয়েকজন। তাদের এরুপ অপ্রত্যাশিত আচরনে ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ পরিষদের দ্বিতীয়তলায় গিয়ে গেইট বন্ধ করে রাখেন। সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রশাসনকে অবহিত করলে, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু, ধৃত মাছ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন।
এছাড়া, বেশ কয়েক বছর যাবত পরিষদের পুরাতন ভবনটি বহিরাগতরা নিজেদের জবরদখলে রেখে ব্যবহারের কথা জানান এই চেয়ারম্যান। যার ফলে ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবনের প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও জানান, পরিষদের আয়-রোজগার কম থাকায় অনেক জনপ্রতিনিধির সম্মানী ভাতা আটকে আছে। এমতাবস্থায় তারা পুকুরে মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নেন এবং বর্তমানে তাদের পুরাতন ভবন ভেঙে সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে ২ নং ভুনবীর ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান চেরাগ আলীর পুত্র কাউসার আহমেদ জানান, পুকুরের মাছ ধরা নিয়ে একটি ‘অনাকাঙ্খিত’ ঘটনা ঘটেছে যা স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদেরকে নিয়ে বসে নিষ্পত্তি করেছেন। পুরাতন ভবনটি তাদের ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এ ভবনটি ব্যবহার করে আসছেন। এই জায়গাটি ডিসি খতিয়ানের। তারা এ ব্যাপারে লিজের জন্য ইতিমধ্যে জেলাপ্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পিটিশনের প্রেক্ষিতে এখন জেলা প্রশাসক যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তাই মেনে নেব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাছ ধরা নিয়ে ‘অনাকাঙ্খিত’ ঘটনার বিষয়ে বিগত ১০ আগষ্ট ৯ নং সাঁতগাও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ফয়সালা বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে।
এই ঘটনা ও ইউনিয়ন পরিষদ বহিরাগতদের ব্যবহার সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ‘অতি সম্প্রতি আমরা দু’পক্ষকে নিয়ে বসে মাছ ধরা নিয়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনার বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। যারা ‘অনাকাঙ্খিত’ ঘটনায় জড়িত ছিলেন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আর পুরাতন ভবনটিতে ভুনবীর ইউপির প্রয়াত চেয়াম্যান সাহেব বসতেন, এক প্রকার মৌখিক আলাপের মাধ্যমে। এখানে জবরদখলের কিছু নেই। আমি যতটুকু জানি, পুরো জায়গাটি ডিসি খতিয়ানের, ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন যদি ইউনিয়ন পরিষদ চায় সেখানে উন্নয়ন কর্মকান্ড বা সংস্কার কাজ করতে, আর যদি কোনও আইনি বাধা না থাকে তাহলে তারা তা করতে পারে। এক্ষেত্রে যারা ব্যবহার করছেন তারা সেখানে থাকবে না। সে অঙ্গীকারও তারা আমার কাছে করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুনবীর ইউনিয়নের সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান চেরাগ আলী সাতগাঁও ইউনিয়নের পরিত্যক্ত পুরাতন পরিষদ ভবনে নিজের কর্মকান্ডে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করে আসছিলেন। সেই সুবাদে তার মৃত্যুর পরেও তার ছেলেরা ভবনটি গল্পসল্প করার জন্য ব্যবহার করে। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান মিলন শীল এই ভবনটি বহিরাগতদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য উপজেলার বৈঠকে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেন।
সুত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিগত ২২ মে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন করে পরিষদের মালীকানাধীন পুকুরে ইউনিয়ন পরিষদের তত্বাবধানে মৎস চাষের উপযোগী করে ও মৎস চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেন। এছাড়া পরিষদের পুরাতন ভবনটি বহিরাগতরা ব্যবহার করছে বলে এক পত্রে উল্লেখ করেন। তিনি, তা মেরামত করে আয়বর্ধন কাজে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাতগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মিলন শীল শ্রীমঙ্গল থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি করেছেন। জিডি নং- ৬৭৮/১৩ আগষ্ট ২০২০ এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভবনটি ব্যবহারকারীদের অনুকুলে লিখিত পত্র প্রেরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান চেয়ারম্যান মিলন শীল।
ইউনিয়ন সচিব অরুন দত্ত বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের জমি সরকারী সম্পত্তি। এ বিষয়ে আর কোনও বক্তব্য প্রদান করতে তিনি রাজি হননি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবন ইউনিয়ন পরিষদের চৌহদ্দির মধ্যে রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অপরাপর সদস্য ইউনিয়ন পরিষদের সকল ভৌত অবকাঠামো দেখভালের দায়িত্ব, কোন ব্যত্যয় থাকলে তারা আমাদেরকে জানাবে, আমরা যাচাই-বাছাই করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। সাবেক সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের কোন লিজ দেওয়া হয়েছে এমন কিছু জানা নেই। কাগজ-পত্র থাকলে আমাদেরকে অবহিত করতে পারে। আর ‘ভিপি’ও যদি হয় আর সে হিসেবে লিজের আবেদন করলেও সেখানে দখলে থাকার কোন বৈধতা নেই। আবেদন অনুযায়ী সরকার দিলে পাবে না দিলে পাবে না।
আরএ/এসআর