পটুয়াখালীর বাউফলে আইন-শৃংখলার অবনতি হয়েছে। এর ফলে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও খুন বেড়েই চলেছে।
আর এ জন্য পুলিশের কর্তব্যে অবহেলাকে দায়ি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ০২ আগস্ট প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন কেশবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি রুমান তালুকদার ও তার চাচাতো ভাই ইশরাত তালুকদার। এ ঘটনার দুই দিন আগে (৩১ জুলাই) কেশবপুর বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত রুমান তালুকদারের মেঝ ভাই হাফেজ উদ্দিন পিন্টু ও মফিজ উদ্দিন মিন্টুসহ ১০-১২ আহত হয়। এ ঘটনায় নিহত যুবলীগ নেতা রুমানের ভাই ও কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালেহ উদ্দিন পিকু বাদি হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় বাউফল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি মামলা গ্রহণ করেননি।
বাদি অভিযোগ করেন, ওসি ওই সময় মামলা নিলে জোড়া খুন হতো না। যারা খুন করেছেন তারা এজাহারে আসামি ছিলেন।
এছাড়া, গত ২৪ জুন বাউফল থানার সামনে তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় তাপস নামের এক যুবলীগ কর্মী ছুরিকাঘাতের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাউফল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, ওসি (তদন্ত) আল মামুনসহ ২০-২৫ জন পুলিশের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তারা নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। ওই সময় পুলিশ ব্যবস্থা নিলে খুনের ঘটনা এড়ানো যেত। পুলিশের এ রহস্যজনক ভুমিকা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তারা ওসির অপসরণ দাবি করেন। কিন্তু এখনো অদৃশ্য শক্তির কারণে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেলেও ডাকাতদের আটক করতে পুলিশের কোন ভূমিকা চোখে পড়ছে না। অথচ বাউফলের কালাইয়া বন্দরে একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘরে চুরি বেড়ে গেছে। কেশবপুর, নাজিরপুর ও কাছিপাড়া গ্রামে গত দুই সপ্তাহে অর্ধশত চুরি সংঘটিত হয়েছে। ওইসব গ্রামের মানুষ এখন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এসব ঘটনা পুলিশকে অবহিত করা হলেও কোন ধরনের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছেনা।
গত ০৫ আগস্ট কাছিপাড়া বাজারে এক রাতে ১০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৩টি ফ্লাটে চুরি হয়েছে। কোরবানির আগের দিন পৌর শহরের জনৈক আবু বক্কর নামের এক ব্যক্তির গরু চুরি হয়েছে। তিনি থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ইকবাল নামের এক এএসআই তার কাছে টাকা দাবি করেন। এ কারণে তিনি মামলা না করে চলে আসেন।
কালাইয়া ইউনিয়নের দবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষরা তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করতে গেলে এসআই আশিক তার কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি ওই সময় দেড় হাজার টাকা দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার মামলাটি হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার কোন মানুষ থানায় আইনী সহায়তা নিতে এলে থানার এক কনষ্টেবল তা প্রতিপক্ষকে গোপনে জানিয়ে দেন। বিনিময়ে টাকা হাতিয়ে নেন।
এ রকম অভিযোগ রয়েছে এএসআই রফিকের বিরুদ্ধেও।
অপরদিকে বাউফল থানার ওসির বিপক্ষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অভিযোগ, তাকে বিপদকালীন সময় মোবাইলে ফোন করলে তিনি সহসা রিসিভ করেন না।
অবশ্য পুলিশের কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে বাউফল থানার ওসি (তদন্ত) আল মামুন বলেন, 'আমরা আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।'
এ ব্যাপারে বাউফল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পুলিশের। এসব বিষয়ে কোন পুলিশ সদস্যর গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।
-এএস/এমএ