সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্ বলেছেন, 'রেমিটেন্স যোদ্ধার সন্তানদের প্রবাসের মাটিতে যোগ্য কর্মোক্ষম আদর্শ দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রিয়াদের বাংলাদেশি স্কুলের ভূমিকার অনন্য। দেশে ফিরে গিয়েও এই প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণে সাধ্যমত চেষ্টা করবো।'
এছাড়াও, তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টার সাধুবাদ জানান এবং বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের যোগ্য নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূতের বিদায়ের প্রাক্কালে বুধবার রাষ্ট্রদূত ও তাঁর সহধর্মিনী সৈয়দা গুল এ আরজু'র সম্মানে গুগল মিট অ্যাপস ব্যবহার করে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিনী সৈয়দা গুল এ আরজু এ ধরনের আয়োজনে সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর নিখাঁদ ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেন। সময় সুযোগমত প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার প্রকাশ করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ।
সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক খাদেমুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার মিশন উপ-প্রধান এস এম আনিসুল হক, শ্রম কল্যাণ উইং এর কাউন্সিলর ও বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ভাইস চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, এ্যাসিস্ট্যান্স সিগনেটরি ইঞ্জিনিয়ার গোফরান ও কালচারাল ডাইরেক্টর সফিকুল সিরাজুল হক।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলামের কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রথমে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. আফজাল হোসেন তার স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূতের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের নানা দিকের প্রতি আলোকপাত করেন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও বিভিন্ন দুঃসময়ে তার মানবিক ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্টদূতের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন ও মিসেস গোলাম মসীহ্ এর উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন সিনিয়র শিক্ষিকা আসমা জাহান।
বিশেষ অতিথির সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় সফিকুল সিরাজুল হক বিদ্যালয়ের দুঃসময়ে রাষ্টদূতের সহানুভূতিশীল এবং বাস্তবধর্মী প্রদক্ষেপের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
ইঞ্জিনিয়ার গোফরান বলেন, যত দুঃসময় এসেছে রাষ্টদূত মহোদয় অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সকল সংকট মোকাবিলা করে প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধার সন্তানদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে অসামান্য ভূমিকা পালনে সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন। সততা এবং নিষ্ঠার পরাকাষ্টায় তিনি একজন সফল রাষ্ট্রদূত।
মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্টদূত ছিলেন আমাদের একজন যোগ্য অভিভাবক। তিনি প্রবাসীদের কল্যাণে যে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন রেমিটেন্স যোদ্ধারা আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দুঃসময়ে তিনি একজন যোগ্য অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও অনুদান এনে সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুদানের ক্ষেত্রেও প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধারা আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতকে স্মরণ করবে।
মেহেদী হাসান তাঁর বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রদূত বিদ্যালয়ের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ চিন্তায় তিনি সদাজাগ্রত ছিলেন। তাঁর সততা ও নিষ্ঠা প্রবাসীরা অকুণ্ঠ ভালোবাসায় স্মরণ করবে।
মিনিস্টার এস এম আনিসুল হক বলেন, রাষ্ট্রদূত সবসময় এ বিদ্যালয়ের বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। আমরা আশা করবো তিনি দেশে গিয়েও উপযুক্ত স্থানে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে তা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
সভার সভাপতি ও বোর্ড চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে প্রতিষ্ঠানের প্রতি মান্যবরের অসামান্য অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত মহোদয় ছিলেন আমাদের একজন যোগ্য অভিভাবক। তিনি ছায়ার মতো প্রবাসীদের আগলে রেখেছিলেন। সমস্যার যত বড় মহীরূহ হোক না কেন তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করে দিতেন। তিনি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পরে রাষ্ট্রদূত ও তাঁর সহধর্মিনীর সুস্বাস্থ্যময় দীর্ঘ জীবন এবং দেশ ও জাতির সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালিত হয়। মোনজাত পরিচালনা করেন ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক নেসার উদ্দিন।
পরে বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মানপত্রের দুটি স্মারক ক্রেস্ট ও কিছু উপহার সামগ্রী রাষ্ট্রদূত ও তাঁর সহধর্মিনী মিসেস সৈয়দা গুল এ আরজুর হাতে তুলে দেন।
রাষ্ট্রদূতও প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি স্মারক ক্রেস্ট উপহার দেন।
প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং কাউন্সিলর ও বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান, বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ভাইস চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, এসিস্ট্যান্ট সিগনেটরি ইঞ্জিনিয়ার গোফরান, কালচারাল ডাইরেক্টর সফিকুল সিরাজুল হক ও অধ্যক্ষ মো. আফজাল হোসেন।
-এসসি/এমএ