করোনার বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন’ র্কমসূচির কারণে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর বেড়িবাঁধে বসবাসরত ৫ হাজার পরিবার।
বেড়িবাঁধে এসব পরিবার ঘিঞ্জি আর নোংড়া পরিবেশে বসবাস করছে। মানছে না সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস এদের জীবনে বেশ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন বেড়িবাঁধের জেলে পল্লীর জেলেরা।
জেলে পল্লীতে চলছে চরম অভাব অনটন। এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধে যে ত্রাণ দিয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলে পল্লীর মানুষ।
চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল, নুরাবাদ ও আহম্মপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ঘুরে জানা যায়, এখানে জেলে, মাঝিসহ খেটে খাওয়া মানুষের এখন দুর্বিষহ জীবন চলছে।
বেড়িবাঁধে আশ্রিত জেলেরা জানান, তাদের কাছে করোনার থেকে বেশি ভয় না খেয়ে মরার। তাই প্রশাসনের বাধা ও করোনা আতঙ্ক মাথায় নিয়েই ঝড়, জলোচ্ছ্বাস সবকিছুই মোকাবিলা করে তারা তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকারে যান। কিন্তু বিধিবাম, নদীতে মাছ নেই।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অন্য কাজও পারছেন না। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রাণঘাতী করোনা তছনছ করে দিয়েছে।কর্মহীন হয়ে পড়ায় করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি জীবিকা নিয়ে বড়ো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
নীলকমল ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের তেঁতুলিয়া নদীর বেড়িবাঁধে বসবাসরত জেলে মো. জুলহাস (৩৭), শাহানুর পাটোয়ারি (৪৪) ও সালাম (৩৮) জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন তারা নদীতে মাছ ধরতে পারেননি। অভাবের তারণায় প্রশাসনের বাধা ও করোনা আতঙ্ক মাথায় নিয়েই নদীতে গিয়েও মাছ
পাচ্ছেন না।
নুরাবাদ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধে বসবাসরত দিনমজুর আবু কালাম (৩৮), সেলিম (৪০) ও সিরাজ (৪২) এবং আহাম্মদুর ইউনিয়নে চৌকিদার খাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধে বসবাসরত জেলে শফিজল (৪২) জানান, কী করবো, ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। ছেলে-মেয়েদের মুখে আহার দিতে হবে। কারও কাছে ধার চেয়েও পাইনি।
সরকারি তো সাহায্য দেয়, কাজে না এসে সেখান থেকে সাহায্য নেয়ার চেষ্টা করেন এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে রেগে উঠে জেলে শফিজল মাঝি (৪২) বলেন, 'সরকার গরিবদের অনেক সাহায্য দিয়েছে। আমার ভাগ্যে কোন দিনই জোটেনি। সরকারের সাহায্য আমাদের জন্য না। সাহায্য এলে চেয়ারম্যান-মেম্বার আর নেতাদের আত্মীয়-স্বজনের ভাগ্যে মিলবে। তাই সব চিন্তা বাদ দিয়ে নদীতে যাব বলে ঘর থেকে বের হয়েছি।'
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, 'চরফ্যাশন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর বেড়িবাঁধে বসবাসরত মানুষের জন্য বিশেষ কোন ত্রাণের বরাদ্দ নেই। তবে উপজেলা প্রশাসন ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সকল ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে এ ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
-এসএফ/এমএ