চরপাতিলার গ্রাম জুড়ে মেঘনার আঁচড়ের চিহ্ন
Published : Wednesday, 8 July, 2020 at 10:16 AM Count : 438
ভোলার চরফ্যাশনের চরপাতিলার পথে প্রশস্ত খোলা মাঠ, জমে থাকা জোয়ারের জল, ভাঙা সাঁকো, সরু খাল, ছড়ানো ছিটানো বাড়িঘর। জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা ভোলার সাগরলকূলের দুর্গম, বেড়িবাঁধবিহীন এই ছোট্ট জনপদে প্রায় ৩ হাজার মানুষের ঝুঁকির জীবন।
মেঘনার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে গ্রামটির অর্ধেক বসতি। নদীর শান্ত স্নিগ্ধ সভাব দেখে বোঝার উপায় নেই বর্ষার প্রমত্তা মেঘনা ভাঙ্গণের তাণ্ডব চালায় এই দ্বীপে। তারপরও থেমে থাকেনা বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
কিন্তু কতটা পারছে? অবস্থা তো বদলাচ্ছে না মোটেই। বসতিরা এখন সরে এসেছেন নিরাপদ দূরত্বে। নদী ভাঙ্গণে বসতবাড়ি, সহায় সম্বল সব হারিয়ে আবার নতুন করে গড়ার স্বপ্ন বিধবা রহিমা বিবির। তারপরও সামান্য বেঁচে থাকার স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেছে তার।
তিনি বলেন, বহুত গাছ গাছালি, ফল ফলাদির গাছ ছিল আমার বাড়িতে। সবই ভেঙ্গে নিয়ে গেছে মেঘনায়। অনেক দিন কান্নাকাটি করে কাটিয়েছি। পরে এখানে এসে নতুন করে বাঁচার জন্য ঘর তুলেছি।
বিধবা রহিমা জানান, নিজ হাতে মাটি কেটে ঘর তুলেছি। এখনো জোয়ারের সময় পানি উঠে ঘরে। তার মতো স্বামী পরিত্যক্তা বহু নারী এই চরে নদী ভাঙ্গণের স্বীকার। তারা অনেকে ঘর তোলা তো দূরের কথা, ঘরের একখানা খুঁটি যোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
কুকরি বাজারের ঘাট থেকে বনের ভেতর দিয়ে উত্তরের নদী ঘুরে পাতিলার পথে। এখন বর্ষা মৌসুম ভাঙ্গণের আতংকে তাদের দিন কাটছে চরবাসীর। নদী ভাঙ্গণে এই গ্রামের অর্ধেক বসতি এখন অসহায়।
তারা বলছে, আমাদের এই বিপদের দিনে আমরা কাউকেই পাশে পাচ্ছিনা। তাদেরও দাবি এখানে ভাঙ্গণ কবলিত এলাকায় বালি পাথর দিয়ে ভাঙ্গণ ঠেকানো।
তবে এলাকার চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, চরপাতিলা, চরকুকরি ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড মাত্র। ছোট এলাকায় প্রায় ৩ হাজার মানুষের বসবাস। তাই সরকার এই এলাকার ভাঙ্গণের বিষয় তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে হিসেব করছে কত লোক বা বসতির জন্য তারা কত টাকা খরচ করবে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে এই ভাঙ্গণ রোধ করা যায়।
জীবন মানে ভাঙ্গা-গড়া। তবে নদী ভাঙ্গণে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলো কি ফিরে পাবে তাদের আগের জীবন?
-এমএ