মেঘনায় নিষিদ্ধ রেণু শিকার |
![]() স্কুল ছুটির দিনে মশারির ঠেলা জাল নিয়ে মেঘনায় ছুটে যায় শাকিল। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ চিংড়ি রেণু ধরতে পারে সে। প্রতিটি বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ টাকা। ফলে বেশ ভালো রোজগার হয় তার। এ উপার্জনেই চলে পরিবার। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা বেতুয়া নদীর পাড়ে কথাগুলো বলছিল শাকিল। সে উপজেলার আছলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। চরফ্যাশনের মেঘনাসংলগ্ন এলাকাগুলোয় এ রকম অনেক শাকিলদের দেখা মেলে। বছরের এ সময়টায় গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করে ভালো রোজগার করে তারা। যদিও উপকূলে মেঘনা নদীতে চিংড়ি রেণু সংগ্রহ সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ। কারণ খুব সরু ফাঁসের জাল ব্যবহার করার কারণে অন্যান্য মাছের রেণু নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই লোভনীয় উপার্জনের সুযোগ হাতছাড়া করে না কেউ। শিশু, কিশোর, জেলে ও ব্যবসায়ী সবাই ধরছে রেণু পোনা। কর্তৃপক্ষের তেমন তৎ্পরতাও দেখা যায় না। আর এভাবে অবাধে রেণু পোনা ধরার কারণে মেঘনা নদী থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার সীমানা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় গলদা ও বাগদা চিংড়ির পোনা বিচরণ করে। তাই প্রতিদিন চরফ্যাশনে বেতুয়া ও সামরাজে এলাকা থেকে শুরু করে মনপুরার হাজির হাটসহ লালমোহন উপজেলার মঙ্গলসিকদার পর্যন্ত মেঘনা নদীর কূলে বহু নারী-পুরুষ ও শিশু মশারির জাল দিয়ে চিংড়ির রেণু ধরছে। রেণু শিকারিরা জনান, বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত বাগদা রেণু পাওয়া যায় নদীতে। ইলিশ বা অন্যান্য মাছ ধরতে হলে নদীর গভীরে যেতে হয়। দরকার পড়ে নৌকার, ইঞ্জিন চালিত নৌকার জন্য আবার জ্বালানি তেল লাগে, সব মিলিয়ে তাতে খরচ ও শ্রম দুই-ই লাগে অনেক বেশি। আর বাগদা রেণু শিকার করা যায় নদীর তীর ঘেঁষেই, সঙ্গে একটা মশারি জাল আর পাত্র হলেই চলে। অন্য মাছ ধরার চেয়ে অনেক সহজে ও বিনা পুঁজিতে শিকার করা যায় বাগদা রেণু। আর দামও পাওয়া যায় ভালো। মেঘনার গলদা চিংড়ির পোনা অল্প সময়ে বড় হয়। এ কারণে চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে মেঘনার পোনার চাহিদা বেশি । প্রতি মৌসুমে এখানে শতাধিক কোটি টাকার পোনা বিক্রি হয়। করিম ব্যাপারী বলেন, পোনা ধরা যে অবৈধ, তা আমরাও জানি। এ ব্যবসায় আমাদের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। তাই তারা পোনা না ধরে থাকতে পারেন না। এর সঙ্গে অন্যান্য প্রজাতির পোনা নষ্ট হওয়ায় শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান মানবাধিকার কর্মী মাহাবুবুর রহমান। বিষয়টি স্বীকার করে চরফ্যাশন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, 'ঝটিকা অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হয়। পোড়ানো হয় মশারির জাল।' তবে এ সময় মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানও করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। -এমএ |