For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

করোনা চিকিৎসায় এখনো কোন ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট নেই : আমীরুল হক

Published : Sunday, 5 July, 2020 at 2:41 PM Count : 718

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে চট্টগ্রামের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার দিক থেকে চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে। চট্টগ্রামের করোনা উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রামের রোগীরা চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন। চট্টগ্রামবাসীর হাহাকারের প্রেক্ষিতে অনেক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব করোনারোগীদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে এসেছেন। নিরবে নিভৃতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। মানবতার সেবায় তাদের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ সকলের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের একজন সমাজহিতৈষী ও মানবদরদী এধরণের ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সীকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আীমরুল হক। 

গত ২৪ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালের জন্য সাতটিসহ এযাবৎ মোট ৪০টি ভেন্টিলেটর দিয়েছেন। গত ৪ জুন সীকম গ্রুপ আগ্রাবাদের সিটি হল কনভেনশন হলকে আইসোলেশন সেন্টার করার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তন্তর করেন। ২৫০ শয্যার এ আইসোলেশন সেন্টারে ইতোমধ্যে কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জরুরি সেবা দিতে ১০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এনেছে সীকম গ্রুপ। 

সীকম গ্রুপের পক্ষ ১০টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা কার্গো ফ্লাইটে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো চট্টগ্রামের যেসব হাসপাতালে প্রয়োজন হবে সেখানে দেয়া হবে। সীকম গ্রুপের শিল্পকারখানা রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সব মিলিয়ে কাজ করেন প্রায় সাত হাজার লোক। যার মধ্যে সরাসরি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট দুই হাজার লোককে কারখানায় রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কারখানার মধ্যে ঢাকার অদূরের মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে প্রায় ১০০ একর জায়গা নিয়ে রয়েছে গ্রুপের সবচেয়ে বড় শিল্প এলাকা। 

এ ছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও মোংলায় রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির আরও শিল্পকারখানা। এ তিন প্রকল্প (কারখানা) এলাকাতেই শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রায় ১ হাজার ৩০০ কর্মীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরের কারখানা এলাকায়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন এলাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল সিমেন্ট কারখানা এলাকায় প্রায় ৫০০ জন এবং মোংলা বন্দরসংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত এডিবল অয়েল রিফাইনারি ও এলপিজির কারখানার অভ্যন্তরে ২০০ জনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গাড়িচালক সবাই আছেন।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির কারখানা এলাকায় কিছু কর্মীর আবাসন সুবিধা আগে থেকেই ছিল। করোনাকালে বাড়তি শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করতে কারখানার ভেতরে তৈরি করা হয়েছে বাড়তি শেড। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও নেওয়া হয়েছে নালা পদক্ষেপ। হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই সব কিছুরই ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ করোনায় প্রতিষ্ঠানটির আয় কমেছে অর্ধেকের বেশি।

কেন এমন ব্যতিক্রর্মী উদ্যোগ প্রশ্ন করা হলে আমীরুল হক বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন পেশায় একজন আইনজীবী। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। ৮৪ সালে ব্যবসা শুরু করেছি। সেখান থেকে আজকের অবস্থানে এসেছি। কোনো যন্ত্র আমাকে রাতারাতি এত শিল্পের মালিক বানিয়ে দেয়নি। আমাকে এ পর্যায়ে এনেছেন যন্ত্রের পেছনে কাজ করা মানুষগুলো। সুদিনে তাঁর প্রতিষ্ঠানকে অনেক কিছু দিয়েছেন, তাই এ খারাপ সময়ে অভিভাবক হিসেবে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।

আমীরুল হক বলেন, করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রামের নাজুক অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে কিছু করার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, আশ্চর্য্য হলেও সত্য যে, করোনার চিকিৎসা সংকট মোকাবেলায এখনো পর্যন্ত কোন ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট নেই। সমন্বিত কোন উদ্যোগ নেই। চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বেহাল দশার নেপথ্য কারণ দুর্নীতি ও চিকিসকদের দলাদলি। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন পাকিস্তান আমলে করাচির তুলনায় ঢাকা ছিল অবহেলিত। স্বাধীনতাত্তোর সবকিছু ঢাকা-নির্ভর। অবহেলার শিকার চট্টগ্রাম। এখানে প্রণিদানযোগ্য চট্টগ্রামে শুধু একটি ভেটেরিনারী কলেজ করার জন্য মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীকে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আমীরুল হক বলেন, দেশের হাজার হাজার লোক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর একমাত্র কারণ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর তাদের আস্থা নেই। অথচ বিদেশি চিকিৎসক এখানে আসার সুযোগ দিলে দেশের মানুষের কষ্ট করে বিদেশ যেতে হত না। বৈদেশিক মূদ্রারও সাশ্রয় হত। তিনি বলেন, হলিক্রিসেন্টের মত হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হয়েছে এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে বিদেশি চিকিৎসক আসতে দেয়া হয়নি এটাতো অনেকেই জানে। 

প্রসংঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ফাইভ স্টার হোটেল সমূহের জিএম ও কুক বিদেশি। অথচ বিদেশ থেকে চিকিৎসক কিংবা টেকনিশিয়ান আনা যাবে না। ৫ বছর কিংবা ১০ বছরের জন্য তাদের আসার সুযোগ দিয়ে আমাদের দেশের লোকদের প্রশিক্ষিত করে তুলে এরপর নাহয় বন্ধ করে দেয়া হোক। বিএমডিসিকে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিৎ। তিনি প্রশ্ন করেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গৃহপরিচারিকা পাঠানোর প্রয়োজন কি? সেখানে নার্সের সংকট রয়েছে। দেশের ৪৬৪ উপজেলায় নার্সিং ইনস্টিটিট করে প্রশিক্ষিত নার্সদের বিদেশে পাঠালে অনেক লাভ হত। এজন্য চিকিৎসা খাতে প্রনোদনা দিতে হবে।

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমন কিছু কলেজ ও বিশ^বিদ্যায় আছে যেগুলো শিক্ষার কোন মান নেই। সেগুলো সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। মেডিকেল শিক্ষা মানুষের জীবন মরণের সাথে সম্পৃক্ত। এটা নিয়ে হেলাফেলা করার কথা নয়। এদেশে সেটাও হচ্ছে।

আমিরুল হক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হল, আমাদের দেশের দু’টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত শিক্ষা ও চিকিৎসায় রাজনীতি ঢুকে পড়ায় কোন উন্নতি হচ্ছে না। বিশেষ করে চিকিৎসা ব্যবস্থা রাজনীতির নামে কিছু লোকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা এই দু’টি পেশা রাজনীতির বাইরে রাখা উচিৎ।

এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft