করোনা বেদে পরিবারগুলোতে বাড়িয়েছে ক্ষুদার জ্বালা
Published : Tuesday, 30 June, 2020 at 7:23 PM Count : 433
দেশে চলছে করোনার তাণ্ডব। ধনী থেকে শুরু করে গরীব সবখানেই প্রভাব পড়েছে করোনার। কর্মহীন হচ্ছে মানুষ। বাড়ছে দুর্ভোগ। এই করোনার প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি যাযাবর বেদেরাও। এতে করে চরম দুর্ভোগে ভোলার লালমোহন উপজেলার প্রায় ২৫টি বেদে পরিবার। এর মধ্যে ৭টি পরিবারের বসবাস লাঙ্গলখালী স্টুডিয়ামে। আর বাকি ১৮ পরিবারের বসবাস শাহাবাজপুর কলেজপাড়া এলাকায়। এসব পরিবারের জীবনমান ভিন্ন। এরা বাস করেন ভাসমান ঝুপড়ি ঘরে। যেখানে বৃষ্টি হলেই চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে যায় তাদের। জেগে থাকতে হয় সারা রাত।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাদের খুব কষ্ট করে থাকতে হয় এই ঝুপড়ি ঘরে। সংসার পরিচালনার জন্য নারী-পুরুষ সকলেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তাবিজ-কবজ, সাপ ধরা, মালা ও কড়ি বিক্রি করে টাকা আয় করেন। যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার। করোনার আগে বেচা-বিক্রি ভালো থাকলেও এখন চরম দুর্ভোগে এরা। করোনার কারণে তেমন আয় নেই তাদের। বর্তমানে চুলায় এক বেলাই আগুন জ্বলে এদের। দিনের তিন বেলার মধ্যে এক বেলা অথবা সর্বোচ্চ দু’বেলা খেতে পারছেন তারা। তাও ভাগ্যে ভালো কোনো খাবার জুটছে না। কেবল আলু, ডাল আর ভাত খেয়েই দিন পার করেছেন তারা।
নিজেদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে লালমোহন পৌরশহরের লাঙ্গলখালী এলাকার স্টুডিয়ামে বসবাসরত আলাউদ্দিন, তরিকুল, জোসনা ও রোজিনা বলেন, করোনার আগে তাবিজ-কবজ, সাপ ধরা, মালা ও কড়ি বিক্রি করে মোটামোটি দৈনিক ৭ থেকে ৮শত টাকা আয় হতো। এখন করোনার কারণে গত ৩ মাস আয় নেই। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব দুর্ভোগে আছি। পাশের দোকান থেকে বর্তমানে বাকিতে চাল, ডাল আর আলু কিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছি। ভালো কোনো কিছু কিনতেও পারছি না। তাই একই রকমের খাবার খেয়ে দিন পার করছি। মাথার গোঁজার ঝুপড়ি ঘর দিয়ে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। সবকিছু মিলেয়ে ভালো নেই আমরা কেউ। তবুও এই করোনাকালে কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। পাইনি সরকারী কোনো সহযোগিতা। তাই আমরা সরকারের কাছে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার দাবী করছি।
এব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন বলেন, বেদেদের জন্য আগে বেদে ভাতা নামে একটি প্রকল্প ছিলো। যা বর্তমানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা নামে। তবে এক্ষেত্রে ভূক্তভোগীদের বয়স ৫০ হতে হবে। এছাড়া আপাতত বেদেদের জন্য সমাজ সেবা থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি জানান, এই মুহূর্তে অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা না করতে পারলেও খুব শিগগিরই উপজেলার সকল বেদে পরিবারকে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
এইচপি/এইচএস