রাজশাহী মহানগরীর রাস্তায় ২০০০ সালের দিকে হাতেগোনা রিকশা, টেম্পু আর বেশকিছু প্রাইভেটকার চলাচল করতো। যানজট কী! তা এই শহরের মানুষ অনুধাবনই করেনি। সেই সময় মহানগরবাসী ঢাকার যানজটের গল্প শুনে হাহুতাশ করেছে।
তবে দুই দশকের ব্যবধানে বিভাগীয় শহর রাজশাহী মহানগরীতে মানুষের পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মহানগরীতে যানজট এখন নিত্য দিনের সঙ্গি। আর ডিজিটাল যুগে এসে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) এলাকায় যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ও গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগকে হাতের ইশারায় সড়কের চলন্ত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। এতে করে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চালক ও পথচারীদের। সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
তবে আশার কথা রাসিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন। এবারের বাজেটে এনিয়ে পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সয়ংক্রিয় ভাবে যানচলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন ১৯৯৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩ দফায় মহানগরীর ২০টি বেশি পয়েন্টে সয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করে। সিটি কর্পোরেশনের যন্ত্র ও বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে সেকেলে সিগন্যাল বাতিগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ২১ বছর আগে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে তিন দফায় মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি, লক্ষ্মীপুর, বিন্দুর মোড়, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, মনিচত্বর ও তালাইমারী মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি (সংকেত বাতি) বসানো হয়।
পরে ২০০২ সালে ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) বন্ধগেট, বহরমপুর বাইপাস রোড, কোর্ট স্টেশন মোড়, কাশিয়াডাঙ্গা নতুন বাইপাস মোড় ও কাশিয়াডাঙ্গা পুরনো সড়ক মোড় এলাকায় বসানো হয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। এরপর ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগরীর উৎসব সিনেমা হল মোড়, সাগরপাড়া বটতলা, শিরোইল স্টেশন মোড়, শহীদ জিয়া শিশুপার্কের সামনের মোড় ও নওদাপাড়া আমচত্বর মোড় এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন হয়। তবে এর সবই এখন এক একটি অকেজো পোল।
ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, হাতের ইশারায় যানবাহনের গতি ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করেতে ট্রাফিক বিভাগকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। নগরীতে যানবাহনের সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোর চালকদের দৌরাত্ম বেশি। সড়কে চলাচলে তাদের নূন্যতম ধারণা নেই বা তারা নিজেরা ইচ্ছাকৃত ভাবে সড়ক আইন মানতে চায়না।
ট্রাফিক বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন ও দেখাশুনা করার পুরো দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এগুলো নষ্ট হয়ে আছে। আমাদের পক্ষ থেকে রাসিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এবিষয়ে রাসিক বরাবর ছিঠিও দেয়া হয়েছে। তারা বলেছে এ সিগন্যাল বাতিগুলো খুব তাড়াতাড়ি সংস্কার করে নতুন সিগনাল বাতির ব্যবস্থা করা হবে।
তবে সড়কে দুর্ভোগ কমাতে রাসিক মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন আশার কথা। ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে মহানগরীতে সয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগনালা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়, মহানগরীর ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে (মোড়ে) আধুনিক ট্রাফিক সিগনাল বাতি স্থাপন করা হবে। পরিকল্পনাটি ভারতীয় ঋণ ও সরকারের জিওবি তহবিলের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের ডিপিপি বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধিন আছে। অনুমোদন পেলে ২০২০-২১ অর্থ বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ও বিদ্যুৎ) রেয়াজাত হোসেন জানান, রাসিক বিষয়টির গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে এবছরই কাজ শুরু করা হবে।
আরএইচএফ/এইচএস