For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

পার্বতীপুরে ইট ভাটার ধোঁয়ায় ধান-মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

Published : Wednesday, 3 June, 2020 at 6:19 PM Count : 802

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ইট ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ধান মৌসুমী ফসল আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে এলাকার কলা গাছ, আমের বাগানসহ অন্যান্য গাছ-গাছালি পুড়ে যাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, ভাটার কালো ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে এলাকায় বাড়ি ঘরের টিন। ইট তৈরীর জন্য এসব ভাটায় প্রতিনিয়তই ট্রাকযোগে জমির উপরি ভাগের মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিয়ে যাওয়ায় জমির উর্বরা শক্তি কমে গেছে। এতে এসব এলাকায় ফসলের উৎপাদনও কমে গেছে। 

এসব থেকে পরিত্রাণের জন্য পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন শতাধিক মানুষ। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষের। বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক ক্ষতির অভিযোগও রয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী (ধুলাউদাল) গ্রামের তরিফুল, রেজাউল, শাহিনুর, আ. মজিদ, মোস্তফা জামান, হাসিনুরসহ স্থানীরা ক্ষতিগ্রস্তদের গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দেন। ওই অভিযোগের কপি দেয়া হয়েছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর, উপজেলা কৃষি অফিসার পার্বতীপুরসহ অন্যদের।
এতে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও হামিদপুর মৌজায় দুটি ওয়ার্ডে অবস্থিত ৭টি ইট ভাটার মধ্যে কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র না থাকা সত্বেও ৬টিতে দেদারছে কার্যক্রম চালাচ্ছেন ভাটা মালিকরা।

অপরটির কাগজপত্র না থাকায় ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন মালিক।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোহাগী ব্রিক্স, আরএম ব্রিক্স, সিয়া ব্রিক্স, একতা ব্রিক্স, এআর ব্রিক্স ও একে ব্রিক্স। এসব ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাসের কারণে এলাকার পরিবেশ দূষণ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা তাদের ফসল পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন। 

তারা আশংকা করছেন এভাবে ইট ভাটার কার্যক্রম চলতে থাকলে আগামীতে এ এলাকার কোন জমিতে আম, লিচু বাগান ও ধান ক্ষেতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

১৫ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৫২) নামে এক ব্যক্তি। তার অভিযোগ বাগানের পাশের ইট ভাটার ধোঁয়ায় দুই হাজার গাছের মধ্যে আম ধরেছে ১২শ গাছে। নিচের অংশে পঁচন ধরার পাশাপাশি ঝরে পড়ছে এসব আম। সেই সাথে পরিপক্কের সময় পেড়িয়ে গেলেও আমের পূর্ণতা না আসায় আকারে ছোটই রয়েছে বাগানের এসব আম। 

তার অভিযোগ, পূর্বে এ বাগানের আম ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বাগানে এসে আমের অবস্থা দেখে ফেরত যাচ্ছেন ক্রেতা পাইকাড়রা।

একই অভিযোগ করেছেন মোস্তফা জামান (৫০) নামের আরেক ব্যক্তি। ৩ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন তিনি।

৪’শ গাছ লাগানো আম বাগানের মালিক লিয়াকত আলী (৬৫), কামরুজ্জামানের দেড় একর জমিতে লাগানো আম বাগান, আ. রহমানের ২ একর জমিতে লাগানো আম, লিচু ও বাঁশ পুড়ে যাওয়ায় তারা একই অভিযোগ করেছেন। 

তারা আরও বলেন, এ এলাকার সবগুলো ইট ভাটা ১ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এসব ইট ভাটার ধোঁয়ায় তারা সর্বশান্ত হয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

ক্ষতিগ্রস্থরা আরও জানান, এলাকার ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ অর্থনৈতিক ও শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। এ ঘটনায় প্রশাসনের নিকট একাধিকবার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

জানা যায়, পার্বতীপুর উপজেলায় ৫০টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টির বৈধ গজপত্র আছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র হামিদপুর ইউনিয়নেই রয়েছে ১৯টি ইট ভাটা। তার মধ্যে ৬টির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে এআর ব্রিক্সের সত্ত্বাধিকারী হাজী রেজওয়ানুল হক বলেন, ২০১১ সাল থেকে তিনি ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। এর আগে কোন অভিযোগ ওঠেনি। তার ইট ভাটার পরিবেশ অভিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিলো। এবার এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পাননি তিনি। 

তিনি আরও বলেন, আগে ফসলি জমির ১ হাজার মিটারের মধ্যে ইট ভাটার ছাড়পত্র দেয়া হতো। আর বর্তমানে ৫শ মিটারে। তার ইট ভাটা থেকে ৮শ মিটার দূরত্বে ফসলি জমি অবস্থিত। এ কারণে ছাড়পত্র পাওয়ার আশা করছি।

একে ব্রিক্সের মালিক হাজী কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে তিনি ভাটা চালিয়ে আসছেন। চলতি বছর নিয়ে তার ইট ভাটা পরিচালনার বয়স ৩ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে ইতিপূর্বে কেউ অভিযোগ করেনি। যারা আমাকে ইট ভাটার জন্য জমি দিয়েছেন এখন তারাই আবার অভিযোগ করছেন।

এদিকে, গণস্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রাকিবুল হক টুটুল, জিল্লুর রহমান সরকার, আমিনুল হক বাচ্চু, শাহাদত হোসেন ও মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হতো। এখন কয়লার পরিবর্তে কয়লার ডাস্ট, এর সঙ্গে বোতাম, প্লাস্টিক ও রাবারকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। ফলে বিষাক্ত গ্যাস, কালো ধোঁয়ায় গাছপালাসহ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানান অসুখ বিসুখ হচ্ছে।

পরিবেশ ও বন বিভাগ মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, উন্নত মানের কয়লা ব্যবহার করে ইট ভাটা পরিচালনার নিয়ম আছে। তবে এর ব্যত্যয় হলে ছাড়পত্র পাওয়ার কথা নয়। কয়লার ডাস্ট ও অন্যান্য উপাদান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

পার্বতীপুর কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান বলেন, উল্লেখিত ৬টি ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে তদন্ত ভার দেয়ার পর গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাহনাজ মিথুন মুন্নী বলেন, কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্ত ভার দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে।

-এএএম/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft