For English Version
শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
হোম

লকডাউন ছাড়াই করোনা মোকাবেলায় যেভাবে সফল তুরস্ক

Published : Friday, 29 May, 2020 at 9:30 PM Count : 906

তুরস্কে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল ১১ মার্চ। এরপর থেকে বেশ দ্রুত দেশের প্রতিটি জায়গায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। একমাসের মধ্যেই তুরস্কের সবগুলো প্রদেশ আক্রান্ত হয়।

চীন এবং ব্রিটেনের তুলনায় বেশ দ্রুত গতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তুরস্কে। অনেকে আশংকা করেছিল যে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়বে। তুরস্কের অবস্থা হয়তো ইতালির মতো হয়ে উঠতে পারে - এমন আশংকাও ছিল।

কিন্তু প্রায় তিন মাসের মাথায় এসেও সেটি ঘটেনি। এমনকি তুরস্কে পুরোপুরি লকডাউনও দেয়া হয়নি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৯৭ জন। কিন্তু অনেক চিকিৎসক মনে করেন প্রকৃত অর্থে মৃতের সংখ্যা এর দ্বিগুণ হতে পারে। কারণ, যারা পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড১৯ রোগী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে সেটিকে পরিসংখ্যানে দেখানো হয়।

কিন্তু তারপরেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ংকর দিনগুলোতে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
অস্বাভাবিক লকডাউন
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, তুরস্কের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, বহু দেশে এখনে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তবে ব্রিটেনের কেন্ট ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজির শিক্ষক জেরেমি রসম্যান বলেন, তুরস্ক বেশ পরিষ্কারভাবেই একটি বড় ধরণের দুর্যোগ পাশ কাটিয়ে গেছে।

"যে কয়েকটি দেশ মোটামুটি দ্রুততার সাথে টেস্ট করেছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের সনাক্ত করার মাধ্যমে তাদের আলাদা করেছে, তদের মধ্যে তুরস্ক অন্যতম," বলেন রসম্যান।

তিনি বলেন, যে কয়েকটি দেশ সংক্রমণের বিস্তার কমাতে সক্ষম হয়েছে তুরস্ক তাদের মধ্যে অন্যতম।

তুরস্কে যখন সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল তখন দেশটিতে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। এর মধ্যে ছিল - গণ পরিবহনসহ বিভিন্ন জায়গায় বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার, রেস্টুরেন্ট ও কফি-শপ বন্ধ করা, জনবহুল জায়গায় শপিং বন্ধ রাখা এবং মসজিদে জমায়েত বন্ধ করা।

যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং ২০ বছরের কম তাদের পুরোপুরি বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে কারফিউ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বড় শহরগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইস্তাম্বুল শহর। এই শহরটি তার ছন্দ হারিয়েছে - হৃৎস্পন্দন ছাড়া হৃদপিণ্ডের মতো অবস্থা হয়েছে ইস্তাম্বুল শহরের।

কিভাবে ভাইরাস খুঁজে বের করা হয়েছে?
তুরস্কে ধীরে ধীরে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসক মালিক নূর আসলান এখনো বেশ সতর্ক। ইস্তাম্বুল শহরের পুরনো অংশে জনবহুল এলাকায় জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন তিনি। আক্রান্ত ব্যক্তি কাদের সংস্পর্শে এসেছেন সেটি খুঁজে বের করার কাজ করে এমন একটি দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন মালিক নূর আসলান। তুরস্কে এ ধরণের ছয় হাজার দল আছে।

তিনি বলেন " আমরা মনে করি, আমরা একটা যুদ্ধের ভেতরে আছি। আমাদের সদস্যরা বাড়িতে যাওয়া ভুলে গেছে। আমরা বলি ঠিক আছে - আধঘণ্টা শেষ। কিন্তু তারা বাড়িতে যাবার চিন্তা করেনা। কারণ, তারা জানে এটা তাদের কর্তব্য যাতে ভাইরাস অন্য কারো মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে।"

তারা মার্চের ১১ তারিখ থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা লোকজনদের খুঁজে বের করার কাজ শুরু করেছেন। দেশটিতে হাম রোগে আক্রান্তদের খুঁজে বের করার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা আছে তুরস্কের।

"পরিকল্পনা তৈরি করা ছিল। আমরা সেগুলো শুধু বের করে কাজে লাগানো শুরু করেছি।"

ইস্তাম্বুল শহরের পুরনো অংশে দুজন চিকিৎসকের সাথে আমরা গিয়েছিলাম। আমারা পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট পরিধান করেছি। সাথে ছিল করোনাভাইরাস শনাক্তকরণর অ্যাপ। সরু একটি রাস্তার ভেতরে একটি অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলাম আমরা। এই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে দুজন কোয়ারেন্টিনে আছেন, যাদের বন্ধু কোভিড১৯ পজিটিভ।

আমরা যাবার পর তারা দরজায় এসে দাঁড়ালেন। তাদের দুজনের বয়স ২০ বছরের কিছু বেশি হবে। দু'জনের মুখেই ছিল মাস্ক। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দু'জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলো এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটার ফলাফল জানা যাবে।

তাদের দু'জনের মধ্যে যখন মৃদু সংক্রমণ দেখা দিল তার একদিনের মধ্যেই পরীক্ষা করা হলো।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তুরস্ক প্রধান ড. ইরশাদ শেখ মনে করেন, তুরস্কের কাছ থেকে কিছু শেখার আছে।

"প্রথম দিকে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। প্রতিদিন ৩৫০০ সংক্রমণ ছিল। টেস্ট করার বিষয়টি কাজে লেগেছে। টেস্টের ফলাফলের জন্য পাঁচ-সাতদিন অপেক্ষা করতে হয়নি," বলছিলেন শেখ।

এছাড়া কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এবং কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে আক্রান্ত রোগীদের যেভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেটি নিয়ে এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি বলে মনে করেন তিনি।

কোভিড১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন-এর ব্যবহার নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তুরস্কে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ওষুধ নিয়ে পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরলেও সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গবেষণায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে কোভিড১৯ এর ওষুধ হিসেবে বাতিল করে দিয়েছে।

কোভিড১৯ রোগীদের ঝুঁকি বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ওষুধকে তাদের তালিকা থেকে স্থগিত করেছে। চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে কোভিড১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করলে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এতে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

তুরস্কের একটি হাসপাতালে ঢোকার জন্য আমাদের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। যে হাসপাতালটিতে আমরা গিয়েছি সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েক হাজার কোভিড১৯ রোগীর ক্ষেত্রে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা হয়েছিল।

এই হাসপাতালটির নাম ড. শেইট ইলহান ভারাঙ্ক হসপিটাল। সরকারি এ হাসপাতালটি দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেশ প্রশস্ত এবং উজ্জ্বল এই হাসপাতালটিতে কোভিড১৯ চিকিৎসা দেয়া হয়।

এই হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক নুরেটিন ইইত বলেন, একেবারে শুরুতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি বলেন, "অন্যান্য দেশ বেশ দেরিতে এই ওষুধ ব্যবহার করছে। বিশেষত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আমরা এটা শুরুতেই ব্যবহার করি। এ ওষুধের ব্যাপারে আমাদের কোন দ্বিধা নেই। আমরা বিশ্বাস করি এটা কার্যকরী, কারণ আমরা ফলাফল পেয়েছি।"

প্রধান চিকিৎসক নুরেটিন ইইত বলেন, শুরুতেই চিকিৎসা দেবার মাধ্যমে ভাইরাসের আগে হাঁটতে চায় তুরস্ক। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধ এবং প্লাজমা থেরাপি ও অক্সিজেন দেয়া হয়।

ড. ইইত বলেন, তার হাসপাতালে কোভিড ১৯ রোগে মৃত্যুর হার এক শতাংশের নিচে। এই হাসপাতালটির আইসিইউ'র বেড খালি রয়েছে। তারা রোগীদের আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের বাইরে রাখার চেষ্টা করে।

এখনো শেষ হয়নি
তুরস্কের সরকার কোভিড১৯ মহামারিকে যেভাবে মোকাবেলা করেছে সেটি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে দেশটির মেডিকেল এসোসিয়েশনের। সংস্থাটি বলছে সরকারের অনেক ভুল ছিল। এসব ভুলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দীর্ঘ সময় যাবত সীমান্ত খোলা রাখা।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তুরস্কের কিছু প্রশংসা করেছে। তুরস্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ইরশাদ শেখ বলেন, সংক্রমণ এখনো পুরো মাত্রায় উঠেনি। সামনের দিনগুলো আরো মানুষ আক্রান্ত হবে।

কোভিড১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য তুরস্কের কিছু সুবিধা রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ এবং হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা অনেক।

তুরস্ককে একটি সফল উদাহরণ হিসেবে দেখা হলেও এখনো চূড়ান্ত কথা বলার সময় আসেনি। কারণ ঘটনাপ্রবাহ এখনো শেষ হয়নি। বিবিসি

এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft