For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

করোনায় ঈদে পর্যটক শূন্য রাঙ্গামাটি, স্পটে নেই মানুষের কোলাহল

Published : Friday, 29 May, 2020 at 8:16 PM Count : 739

প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ভীড়ে লোকে লোকারণ্য থাকলেও এবছর বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের কারণে প্রতিটি পর্যটন স্পটে নেই মানুষের কোলাহল। স্তব্দ হয়ে আছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন। মানুষ বাঁচতে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হয়ে আছে। আর সব জায়গায় চলছে অঘোষিত লকডাউন।

আর সারাদেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে করোনার ভয়াবহতা ছুঁয়ে গেছে। জেলার সকল প্রকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান বাহন চলাচল। থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। মানুষ বিনা কারণে ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

তবে কিছুদিন আগে ঈদকে সামনে রেখে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কিছু শপিংমল সীমিত আকারে খুলে দেয়া হলেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাও আবার জেলা প্রশাসনের জরুরী সভা করে ব্যবসায়দের অনুরোধ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আবারো বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। আর শহরে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এবং করোনার আতঙ্কের কারণে পুরো শহর নিরব নিস্তব্ধ।

এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতিবছর পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলোকে সাজিয়ে তোলা হয় নব রূপ সাজে। কিন্তু এইবার বৈশ্বিক করোনা সব পরিকল্পনা কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে মানুষের আনন্দ উল্লাস। এই বছর রাঙ্গামাটিসহ দুই পার্বত্য এলাকায় কোন পর্যটকের আগমন ঘটেনি। তাই প্রতি বছর পর্যটকদের পদচারণায় মুখোরিত থাকলেও এবছর যেন অন্যরকম এক আতংকের ঈদ আয়োজন।
আর এতে করে পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরা বেকার হয়ে পড়েছেন। গুণছে হচ্ছে লাখ লাখ টাকার লোকসান। একদিকে তাদের ব্যাংক ঋণের বোঝা অন্যদিকে ব্যবসা বন্ধ সব মিলে নিদারুন সমস্যা ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিনের পর দিন অতিবাহিত করছেন তারা।

রাঙ্গামাটি বোট মালিক সমিতির সভাপতি রমজান আলী জানান, করোনার কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে রাঙ্গামাটিতে পর্যটক আসা পুরো পুরি বন্ধ রয়েছে। প্রায় চারমাস বন্ধ থাকায় আমরা যেমন বোট মালিকরা কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি, তেমনি বোটের শ্রমিকরা মারাত্মক কষ্টের সাথে পরিবারের ঘানি টানতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বোট মালিকদের মধ্যে অনেকে ব্যাংকের নিয়ে বোট ক্রয় করে পর্যটন ব্যবসায় নেমেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন দুর্দশা নেমে আসবে তারাও কোন দিন এমনটি ভাবেননি। ঋণের বোঝায় তারা আজ জর্জরিত। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন অতিবাহিত করছেন তারাই জানেন।

এছাড়া বোটগুলো বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বোটের যন্ত্রাংশ। আবার বোটগুলোকে সচল রাখলে পোড়াতে হচ্ছে জ্বালানী। যে কারণে আয় না থাকলেও ব্যয় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আবার এই ঈদে পর্যটক আগমন না থাকার কারণে তারা বড় একটি আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

তিনি আরো জানান, সীমিত আয়ের মানুষ হওয়ায় আমরা আমাদের বোট চালক এবং শ্রমিকদের তেমন কোন আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে পারছি না। শ্রমিকদের সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে যা দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে তো সারামাস চলা যাবে না। যে কারণে শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়েছে।

রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দীন সেলিম বলেন, প্রতি বছর ঈদের সময় পর্যটক বরণের জন্য আমরা হোটেল-মোটেলগুলোকে নবরূপে সাজিয়ে তুলি। কিন্তু এই বছর করোনার ভয়াবহতায় আমাদের নেই কোন কাজ। কারণ পর্যটক আসবে না এই বছর। তাই কোন সাজ সজ্জা করিনায়। আর হোটেলের শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছে। কিছু কিছু শ্রমিক চলে গেলেও বেশকিছু শ্রমিক আমরা ধরে রেখেছিলাম ঈদের জন্য। মনে করেছিলাম ঈদের আগে করোনা বিদায় নিবে। কিন্তু না করোনা আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। যে কারণে ধরে রাখা শ্রমিকদের অর্ধেক বেতন দিয়ে আমাদের দেখতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা হোটেল মালিকরা পর্যটক দিয়ে প্রতি বছরে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা করি। কিন্তু এই বছর করোনার কারণে শূন্যহাতে আমাদের থাকতে হচ্ছে। গুণতে হচ্ছে কোটি টাকার লোকসান।

রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশন এর ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, রাঙ্গামাটিতে সারা বছর কিছু না কিছু পর্যটক থাকে। তবে বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহাসহ নানা দিবসে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু এবছর করোনার কারণে আমরা প্রায় চারমাসের মতো ব্যবসা করতে পারিনি।

ম্যানেজার সৃজন বলেন, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে মাস প্রতি ৩৫লাখ টাকা আয় করি, জুন, জুলাই এবং আগষ্ট মাসে কিছুটা বেড়ে মাস প্রতি ৪৫লাখ টাকা এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত মাস প্রতি ৫৫লাখ টাকার ব্যবসা করি। এই বছর আর ব্যবসা হবে না। কারণ করোনার ক্রান্তিকালের দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে। এই বছর সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।

তিনি জানান, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয় তাহলে পর্যটন করপোরেশন ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। চেষ্টা চলবে সরকারের আয়ের পরিধি বাড়াতে।

এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft