For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

কম পুঁজিতে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন চাষিরা

Published : Saturday, 9 May, 2020 at 3:25 PM Count : 785

ডুমুরিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাল্টা চাষ। এখানকার মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলনও ভালো হচ্ছে। কম জায়গায় এবং অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় ডুমুরিয়ার যুবকরা মাল্টার বাণিজ্যিক আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আগামীতে মাল্টা চাষের পরিধি বাড়াতে তারা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জেলার সবচেয়ে ভালো মাল্টা বাগান হচ্ছে ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের থুকড়া ব্লকে কৃষক মেহের আলীর মাল্টা-পেয়ারা মিশ্র ফলবাগান। তিনি প্রথমে কৌতুহলবশত ও পরীক্ষামূলকভাবে নিজ বাড়ির উঠানে ১শ’ মাল্টা চারা রোপণ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। পরে তিনি চার একর জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে একটি ফলের বাগান করেন। তার বাগান দেখে এ উপজেলার অনেকেই এখন মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় বাজারে এ ফলের বেশ চাহিদাও রয়েছে। বাগান থেকে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২শ’ টাকা দরে।

ডুমুরিয়ার মাল্টা গার্ডেনের মালিক মেহের আলী বলেন, ‘টেলিভিশনে একটি মাল্টা বাগানের ওপর প্রতিবেদন দেখে আমি আগ্রহী হই। ২০১৬ সালে বাবার দেওয়া মাত্র ১০ শতক জমিতে ৫০টি গাছ দিয়ে মাল্টা বাগান শুরু করি। সেই থেকে আর আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। আমি বছরে ৩ সাড়ে চার লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করি। আমার জমিতে মাল্টা গাছসহ নানা ধরণের ফলের চারা রয়েছে। আমার কাছ থেকে মাল্টা গাছের চাড়া নিয়ে এলাকার যুবকরা দেড়শ’র বেশি বাগান করেছেন।

তিনি আরও জানান, তার বাগানে মাল্টার পাশাপাশি রঙিন আমসহ বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি আম, সৌদি আরবের খেজুর, মিষ্টি কমলা ও দিনাজপুরের লিচুর গাছ রয়েছে। তবে মাল্টার ওপরই তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন। তার বাগানে বারিমাল্টা-১ (পয়সা মাল্টা), থাইল্যান্ডের বেড়িকাটা মাল্টা ও ভারতীয় প্রলিত মাল্টা এই তিন জাতের মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে গাছের ফলন শুরু হলেও মূলত তিন বছরে একটি গাছে পূর্ণাঙ্গভাবে ফল ধরা শুরু করে। তিন বছরের একটি বয়স্ক গাছে প্রতি মৌসুমে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ মাল্টা ধরে। বর্তমানে তার বাগান পরিচর্যার জন্য ৫ জন লোক কাজ করেন।

তার দেখাদেখি এলাকার বেকার যুবকদের অনেকে মাল্টা বাগান করে বেকারত্ব দূর করছে। মেহের আলীর মাল্টা নিজ এলাকা ছাড়িয়ে পাশের খুলনা দৌলতপুর শহরের ফলের বাজারেও বিক্রি হয়। দূর-দুরান্ত থেকে ফল ব্যবসায়ীরা এসে তার বাগানের মাল্টা কিনে নিয়ে যান। অনেকে আগাম বুকিং দিয়েও মাল্টা কিনেন।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ পেলে আরও বড় পরিসরে উন্নতজাতের মাল্টা চাষ করবেন। তার বাগানের মাল্টা সারাদেশে বাজারজাত করাসহ নার্সারির নাম সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। পাশাপাশি তার একটি গরুর খামার করারও ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান।

ডুমুরিয়া উপজেলার আরশনগর গ্রামের হোসেন সরদার বলেন,‘আমার বাগানে শুধু বিষমুক্ত মাল্টাই নয় কিছুদিন পর সৌদীর খেজুরসহ বিদেশি জাতের আমের ফলন শুরু হবে। আমি চাই এলাকার যুবকরা এ ধরনের বাগান করে সাবলম্বি হোক। এ বিষয়ে যে কেউ আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারে।

মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মেহের আলী তার মাল্টা বাগানে পাইকারদের কাছে মাল্টা বিক্রি করতে ব্যস্ত। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা তার বাগানের মাল্টা ওজন করে প্যাকেটজাত করছেন।

এছাড়া সদর উপজেলার বিকনা গ্রামের খন্দকার ইকবাল মাহামুদের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাগানে মাল্টা গাছের পরিচর্যা করছেন। তিনি ২০১৭ সালে তিন একর জমিতে ২শ’ মাল্টা চারা রোপণ করেছেন। গত বছর থেকে প্রতিটি গাছে ফল ধরছে।

তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তিনি এ বছর কয়েক লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছেন। ভবিষ্যতে তিনি বাগানের পরিধি আরও বাড়াবেন বলে জানান। বেকার যুবকদের তিনি এভাবে স্বাবলম্ভী হওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগে এ উপজেলার সফল মাল্টা চাষী মেহের আলী ও হোসেন সরদার। তাদের বাগান থেকে চারা কিনে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। মেহের আলীর বাগানে উৎপাদিত মাল্টা জাতে বড় ও মিষ্টি। সে আমাদের কৃষি অফিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রাখে। আমরাও সব সময় তাকে আধুনিক কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকি।

খুলনা জেলার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক উদ্যান মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, অল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক হওয়ায় মাল্টা চাষে ঝুঁকছে এলাকার যুবসমাজ। মাল্টা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সব ধরণের সহযোগীতাও করা হচ্ছে। এ বছর জেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে।

এসএমএইচ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft