বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। লকডাউনের আগে দেশটি থেকে প্রতি মাসে গড়ে ১২৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩ টাকা রেমিট্যান্স পাঠাতেন প্রবাসীরা। আর লকডাউন চলাকালীন সময়ে এপ্রিল মাসে অনলাইনে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
মালয়েশিয়া থেকে প্রতি মাসে বৈধ পথে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১৫ থেকে ১৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাসীরা দেশে পাঠাতেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত শুধু এনবিএল মানি ট্রান্সফার থেকে ২৯১ কোটি ০৭ লাখ ৯৩ হাজার ৮১৫ টাকা প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছেন।
বর্তমানে চলমান লকডাউনের কারণে প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রেরণ কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন এনবিএল মানি ট্রান্সফার মালয়েশিয়ার ইভিপি ও সিইও শেখ আকতার উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, 'করোনার কারণে রেমিট্যান্স প্রেরণে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগবে।'
এদিকে, মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেগারার নির্দেশে লকডাউনের মধ্যেই ০৪ মে সোমবার থেকে সবকটি রেমিট্যান্স হাউজ খুলে দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম দিনে দেশে অর্থ পাঠানোর মতো কোন প্রবাসী নেই।
করোনায় রেমিট্যান্স খাতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে সেটা কাটিয়ে উঠতে ৩ থেকে ৬ মাস লাগবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রেমিট্যান্স সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের প্রবাসী আবুল মিয়া। ৪ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকেন। একটি কন্সট্রাকশন সাইটে কাজ করেন। মার্চ থেকেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার সময় পার করছেন। ঘর থেকে বের হতে পারেন না। আগের কিছু পাওনা অর্থ মালিক দিয়েছিল, তা দিয়েই এ কয় দিন চলছে।
তিনি বলেন, 'দেশে পরিবার রয়েছে তাদের খরচ পাঠানো দরকার। কিন্তু কাজ বন্ধ দেশে টাকা পাঠাব কিভাবে? নিজেরই খাওয়ার খরচ নাই। বের হলে পুলিশ ঝামেলা করে। তাই বাইরে যাই না, ঘরেই থাকছি। একটা অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে।'
আরেক প্রবাসী খোকনও কাজ করেন কন্সট্রাকশনে। তিনি বলেন, 'করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে ঘরে বসে আছি। সোমবার থেকে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও কাজে যেতে পারছিনা। কারণ আমার বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। অমার মতো অনেকের কাজ নেই। খুব কষ্টে দিন পার করছি।'
মালয়েশিয়া প্রবাসীরা বলছেন, রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল ছিল। বর্তমানে টাকা পাঠানো প্রায় বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে থাকা প্রবাসী পরিবারে বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রবাসীরা গেল এপ্রিলে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তা বিগত ৩৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। করোনা সঙ্কটে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের এপ্রিলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসেবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিলো ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এদিকে, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমলেও অর্থবছরের ১০ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই- এপ্রিল) রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৩৩০ কোটি ডলার। এই সময়ে রেমিট্যান্স ১৫৭ কোটি ডলার বেড়েছে।
-এএম/এমএ