আজ ৫ মে। ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, প্রাক্তন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আলহাজ মোশারেফ হোসেন শাজাহানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০১২ সালের এই দিনে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সে দিন লাশ দেখার জন্য অগণিত মানুষের ঢল নামে ভোলা শহরে। প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর খবরে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আত্মীয়-স্বজন, দলীয় সহযোদ্ধা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের কান্না ও আহাজারীতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
সে দিন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও শুভাকাংক্ষীরা তাকে অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান।
দিনটি উপলক্ষে প্রতি বছর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, শোক র্যালী এবং শহরের আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে কবর জিয়ারতের পাশাপাশি আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছোট পরিসরে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে।
এদিকে, মোশারেফ হোসেন শাজাহানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, মোশারেফ হোসেন শাজাহানের মত রাজনীতিবিদ বর্তমান সমাজে বিরল। তিনি নিরঅহংকার ও মানবতাবাদী মানুষ ছিলেন। তিনি সব সময় সমাজের কল্যাণের কথা ভাবতেন। যেখানেই মানবতার দূর্যোগ দেখা দিয়েছিল সেখানেই তিনি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, '১৯৬৫ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহাযার্থে ভোলার রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে চাঁদা তুলে সাহায্য নিয়ে সে দিন চট্টগ্রামের অসহায় মানুষদের পাশে গিয়ে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। শুধু সাহায্যই নয় ১৯৭০ সালের ভয়াবহ প্রলংকারী জলোচ্ছাসে শত শত নিহতের পঁচা-গলা লাশ তিনি স্বহস্তে দাফন করেন। লঙ্গরখানা খুলে হাজার হাজার ক্ষুধার্থ মানুষের মুখে আহার তুলে দেবার ব্যবস্তা গ্রহণ করেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতীক জীবনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
মোশারেফ হোসেনের একমাত্র ছেলে মো. আসিফ আলতাফ বলেন, “আমার বাবা শুধু একজন রাজনিতীবিদই ছিলেন না, তিনি একাধারে একজন সাহিত্যিক, কলামিস্ট, নাট্যকার, অভিনেতা হিসেবেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি হানাহানির রাজনীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেননি। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক। সমাজের অবহেলিত মানুষের উন্নয়নের জন্য তিনি বন্ধুজনের মতো একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান করে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন, ভোলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে একজন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ছিলেন ভোলার প্রথম সংগঠক ও নেতা।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বলেন, মোশারেফ হোসেন শাজাহান ছিলেন একজন সৎ, মিষ্টভাষী, নিরহংকারী, অসম্প্রদায়িক, সাহিত্যিক এবং সহজ সরল ব্যক্তি। দল মতের উর্ধ্বে তিনি ভোলার মানুষের কল্যাণের কথা ভাবতেন। রাজনীতি ছিলো তার সমাজ তথা মানব সেবার অংশ। রাজনীতিকে পুঁজি করে তিনি ব্যবসা করেননি। মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। মোশারেফ হোসেন শুধু একটি নাম নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। তার অবিস্মরণীয় বহুমুখী প্রতিভার কারণে তিনি অমর হয়ে থাকবেন ভোলাবাসীর অন্তরে। তার মৃত্যুতে ভোলাবাসী একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, আদর্শবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে।
-এএম/এমএ