করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রোহিঙ্গা শিবিরে ৪জি নেটওয়ার্ক চালুর আহ্বান জনিয়েছেন দেশের ২৫ বিশিষ্ট নাগরিক।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মানবাধিকারকর্মী এবং মানবিক সেবায় নিয়োজিত সংগঠনসমূহের কর্মী এই বিশিষ্টজন, সম্প্রতি প্রায় ৪০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ ভূখন্ডের নৌ-সীমানা থেকে উদ্ধার করার জন্য বাংলাদেশের জনগণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারসমূহ এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং সাধুবাদ জানান।
সেই সঙ্গে পাচারকারীদের দেশীয় আইনে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং অবৈধ মানব পাচার বিষয়ে হটলাইন চালু করাসহ অবৈধ পথে মানব পাচার বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করারও দাবি জানান।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে অতি ঘনবসতির কারণে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আশংকায় উদ্বেগের বিষয়ে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ১১৬ জন মানুষ বসবাস করে। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা মেনে চলা সম্ভব নয়। ফলে কোন ভাবে রোহিঙ্গা শিবিরে কোভিড ১৯ সংক্রমণ হলে তা মারাত্মক গতিতে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। যদি রোহিঙ্গা শিবির অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণহীন প্রাদুর্ভাব ঘটে, তবে এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
তাঁরা বলেন, উখিয়া এবং টেকনাফ অঞ্চলে মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের বিধিনিষেধের ফলে, বর্তমানে স্থানীয় জনগণের মাঝে করোনা ভাইরাস উপসর্গগুলো বিদ্যমান থাকলেও তাদের পক্ষে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি (বিশেষ করে নারী, বয়োবৃদ্ধ), চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ জনস্বাস্থ্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, মানবাধিকার এবং মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত সরকারি, বেসরকারি কর্মীবৃন্দ ও বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জীবন বাঁচাতে মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্যের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমণটির প্রকোপ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী, বিকাশমান মহামারীর সময় সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য এবং হালনাগাদ নির্দেশিকা দ্রুত ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট পৌঁছে দেবে এবং তা একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করতেও সহায়তা করবে।
প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদেরসহ শরণার্থী শিবিরে যারা সবচেয়ে বেশি দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তাদের রক্ষার জন্যে এটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সংক্রমণে আক্রান্ত হবার আগেই, আমরা সরকারকে শরণার্থী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং সহায়তা কর্মীদের মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে, কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে চলমান মোবাইল ইন্টারনেট বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতি প্রদান করেন, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা (গবেষক), ড. রিদোয়ানুল হক ( শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান (উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি), ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ( ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র), ড. মঞ্জুর হাসান ( নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পীস এন্ড জাস্টিস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), ফারাহ কবীর (কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশন এইড বাংলাদেশ), শাহীন আনম ( নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন) রেজাউল করিম চৌধুরী (নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাষ্ট), মাহীন সুলতান (নারী অধিকার আন্দোলন কর্মী), এডভোকেট কামরুন নাহার (নারী অধিকার আন্দোলন কর্মী), জাকির হোসেন (প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ), মোহাম্মদ নূর খান (মানবাধিকার কর্মী)।
কাজী ওমর ফয়সাল (শিক্ষক, এমেরিকান ইউনিভার্সিটি), রেহনুমা আহমেদ, (লেখক), সায়েমা খাতুন (শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), ড. মুবাশের হাসান ( গবেষক, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়, নরওয়ে), ড. স্বপন আদনান (শিক্ষক ও গবেষক), মোহাম্মদ আব্দুলাহ আল নোমান (আইনজীবী), রুহি নাজ (আইনজীবী), হানা শামস আহমেদ ( লেখক/গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী), পারসা সানজানা সাজিদ, (লেখক/গবেষক), মোহাম্মদ সাইমুম রেজা তালুকদার (আইনজীবী ও শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), ফরিদা আক্তার, (মানবাধিকার কর্মী), রেজাউর রহমান লেনিন (গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী), শিরীন প হক (মানবাধিকার কর্মী)।
-এমকে/এমএ