For English Version
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
হোম

নদী দখল করে পার্ক-স্থাপনা

Published : Wednesday, 25 March, 2020 at 3:03 PM Count : 873

হিমালয় বিনোদন পার্ক

হিমালয় বিনোদন পার্ক

নামমাত্র অভিযানেই শেষ করা হয়েছে পঞ্চগড়ে নদীর অবৈধ দখল ও স্থাপনা বিরোধী উচ্ছেদ অভিযান। আড়ালেই রয়ে গেছেন প্রভাবশালী দখলদাররা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, অভিযানের নামে দরিদ্র কিছু পরিবারকে উচ্ছেদ করা হলেও প্রভাবশালীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের যোগসাজসে নদী দখল করে তুলেছেন স্থায়ী স্থাপনা, গড়েছেন বাগান, নির্মাণ করেছেন বিনোদন পার্ক, রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের করা নদী দখলদারদের তালিকা ধরে সারাদেশের মতো পঞ্চগড়েও গত ২৩ ডিসেম্বর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন। ওই দিনই পঞ্চগড় জেলা শহরের করতোয়া নদীর তুলারডাঙ্গা বাঁধ ঘেঁষে গড়ে তোলা ৯৬টি দরিদ্র পরিবারের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করেই অভিযানের ইতি টানের সংশ্লিষ্টরা। 

সেখানে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গড়ে তোলা হচ্ছে সোনার বাংলা পার্ক। এটা সাধারণ মানুষ মেনেও নিয়েছে। কিন্তু নদী রক্ষা কমিশনের প্রকাশিত নদী দখলদারদের তালিকায় থাকা পঞ্চগড়ের প্রভাবশালীদের স্থাপনা উচ্ছেদে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন উদ্যোগ নেয়নি।  
পঞ্চগড় জেলা শহরের তালমা এলাকায় প্রশাসনের নাকের ডগার সামনেই তালমা নদীর প্রায় সাড়ে ৮ একর জমি দখল করে হিমালয় বিনোদন পার্ক গড়ে তুলেছেন শাহীন নামের এক ব্যবসায়ী। বাংলো, সুইমিং পুল, শিশুদের বিভিন্ন রাইডিং, জীবজন্তুর প্রতিকৃতিসহ নদীর উপর স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

তার পাশেই প্রায় সাড়ে ৭ একর জমি দখল করে স্থাপনা তুলেছে সৌদি বাংলা এনভায়রনমেন্ট এন্ড ইকো ফ্রেন্ড লিমিটেড। ওই নদীর কিছু অংশ দখল করে সীমানা প্রাচীর তুলেছেন জেলা কৃষক লীগ নেতা আপেল মাহমুদও। 

বোদা উপজেলায় করতোয়া ও পাম নদীর তিন একরেরও বেশি জমি দখল করে ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন গাছের বাগান গড়ে তুলেছেন নাবিলা অরচার্ড এন্ড লিমিটেডের দাউদ খালিদ সারোয়ার। অথচ এসব প্রভাবশালী দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিতে দেখা যায়নি।

এছাড়া নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড, জেমকন টি এস্টেট লিমিটেড, পঞ্চগড় টি কোম্পানি লিমিটেড, কাঞ্চনজঙ্ঘা টি কোম্পানি লিমিটেডসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীদের নাম রয়েছে। পঞ্চগড়ের করতোয়া, ডাহুক, পাম, ছেতনাই, তালমা, গবরা এই ৬টি নদীর ১৩৩ জন দখলদার প্রায় ৪০ একর জমি দখল করে রেখেছে বলে নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। 

অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে শক্ত শেখড় গেড়েছেন এসব দখলদাররা। দরিদ্রদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করেই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। তারা প্রভাবশালী দখলদারদেরও উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন। 

পঞ্চগড় জেলা শহরের তুলারডাঙ্গা এলাকার মাহফুজার রহমান বলেন, শীতের মধ্যে আমাদের প্রশাসন নদীর পাড় থেকে তুলে দিলো। আমরা গরিব এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই তারা আমাদের তুলে দিতে পেরেছে। কিন্তু এখনো তো অনেক প্রভাবশালী নদী দখল করে আছে অথচ তাদের বিরুদ্ধে তো অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না। এটা কেমন বিচার হলো। এক দেশে দুই আইন। প্রভাবশালীদের জন্য এক রকম গরিবদের জন্য আরেক রকম। 

ওই এলাকার গৃহবধূ মর্জিনা বেগম বলেন, নদী রক্ষার স্বার্থে প্রশাসন আমাদের তুলে দিয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু যেসব প্রভাবশালী এখনো নদী দখল করে আছে তাদেরও যেন তুলে দেয়া হয়। 

এদিকে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিটি দখলদারদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা অসম্পূর্ণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। জেলার প্রত্যেক নদীতেই দখল ও অবৈধ স্থাপনা রয়েছে বলে দাবি তাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় ৩৩ নদী। এসব অধিকাংশ নদীই এখন সমতলের সঙ্গে মিশে গেছে। ছোট নদীগুলো অধিকাংশই এখন দখল করে স্থানীয়রা চাষাবাদ করছেন। কোথাও কোথাও নদী দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেক নদীর দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে তাদের উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি পরিবেশবিদদের।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন পঞ্চগড়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের বলেন, 'জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন পঞ্চগড়ের নদী দখলদারদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ নয় বলে আমরা মনে করি। পঞ্চগড়ের প্রত্যেকটি নদীতেই দখলদার রয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন যে অভিযান পরিচালনা করছে সেটিকে নামমাত্র বলাই ভাল। প্রভাবশালী দখলদারদের উচ্ছেদে কোন উদ্যোগ নিতে আমরা দেখিনি। আমাদের দাবি নদী বাঁচানোর স্বার্থে পঞ্চগড়ের প্রত্যেক নদী থেকেই দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ও প্রকৃতি ফিরিয়ে দিতে হবে।'

পঞ্চগড় হিমালয় বিনোদন পার্কের সত্ত্বাধিকারী মো. শাহীন বলেন, 'নদীর জমি আমি দখল করলাম কোথায়। এটা আমার কেনা জমি। কেউ তো আমাকে ফ্রি দেয় নি। এমনকি নদী এখন যেখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সেটিও আমার কেনা জমি। আমি কোন নদী দখল করিনি। কে কোন তালিকা প্রকাশ করেছে তা আমি দেখিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডও আমাকে কোন নোটিশ করেনি।'

নাবিলা অরচার্ড এন্ড লিমিটেডের মালিক দাউদ খালিদ সারোয়ার বলেন, 'আমি আমাদের খতিয়ানভুক্ত জমিতে বাগান করেছি। তার পাশেই নদী রয়েছে। কেউ হয়তো নদী রক্ষা কমিশনে ভুল তথ্য দিয়েছে। এছাড়া নদী রক্ষা কমিশনের প্রকাশিত তালিকাও আমি এখনো দেখিনি। কেউ আমাকে কোন নোটিশও করেনি।'

অভিযোগ অস্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'শীতের কারণে আমরা উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রেখেছিলাম। ক্রমান্বয়ে প্রত্যেক নদীর দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। সে যতই প্রভাবশালী হোক।'

প্রভাবশালীদের নোটিশ করা হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা নোটিশ করেছি। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।'

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'নদী দখলদারদের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) খোঁজ খবর নিতে বলা হয়েছে। তিনি রিপোর্ট দিলে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।'

-এসআইএস/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft