করোনার আতঙ্ক স্বাস্থ্যকর্মীরা; ব্যাহত সাধারণ চিকিৎসা |
![]() এমন অবস্থা চরবহর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ আমিনুল হকের। অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা নিতে আসলে চিকিৎসক জানান, আগে মাস্ক কিনে পড়ে আসুন পরে চিকিৎসা করবো। প্রায় ঘন্টা খানেক ঘুরে তিনি মাস্ক কিনে আনলেও অপেক্ষমান রোগীদের ভীরের কারনে তিনি চিকিৎসা নিতে পারেননি। করোনায় আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে চিকিৎসকের এমন ধরনের সতর্কতায় গত কয়েকদিন ধরে এই কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন ধরে, তাই একাই চিকিৎসা দিতে হয় আলমগীর হোসেনকে। প্রতিদিন অর্ধশত রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিতে হয় তাকে। সম্প্রতি সংক্রামক ব্যাধী করোনা ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন তিনি নিজেও। এ বিষয়ে তিনি জানান, নিজের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত না হওয়ায় রোগী ঝাঁচাই বাছাই করে দেখতে একটু সময় লাগছে। তাই সঠিক ভাবে চিকিৎসাও দেয়া যাচ্ছে না। সরকারীভাবে তাদের জন্য নিরাপত্তা সামগ্রী বিশেষ করে জীবানুমুক্ত করার জন্য কিছুই দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিভাগের জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবী তার। শ্রীপুরের উত্তর পেলাইদ গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে বসে দূর হতে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচপি) নুরজাহান আক্তার। তিনি জানান, সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের সুরক্ষায় কিছুই দেয়া হয়নি, বাধ্য হয়ে নিজে একটি মাস্ক কিনে ব্যবহার করছি। তাছাড়া নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতেই দূর হতেই রোগের উপস্বর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ২২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় হাজারো চিকিৎসা কর্মী কাজ করেন। এখন পর্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি থেকে এসব কর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে নিজেদের উদ্যোগে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যদিও অনেকেই এসব নির্দেশ আমলে আনছেন না। শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, মা ও শিশুদের টিকাদান কর্মসূচী চালানো, প্রান্তিক মানুষের চিকৎসা সেবা দিতে হয় সম্প্রতি বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনের বিষয়টা তাদেরও দেখতেই হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট না থাকায় তাদের ভয় লাগে। এ কাজ করতে গিয়ে নিজেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে প্রতিদিন। আবদার কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে প্রতিদিন ৭০-৮০জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়। এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচপি) শেফালী খাতুন জানান, নিজেকে নিয়েই এখন যত ভয়। নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় তিনি ক্লিনিকের দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়েই চিকিৎসা সেবার কাজটি করছেন। তবে এখন রোগীর শরীরে হাতের ছোঁয়া এড়িয়ে চলছেন। এতে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষন দাস জানান, শুধু মাত্র করোনার উপস্বর্গ ধারণকারীদের দূর হতে চিকিৎসা সেবা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে, তবে সবাইকে নয়। যারা সকল রোগীকে দূর হতে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা হয়ত ভূল নির্দেশনা বা আতঙ্কিত হয়ে এ কাজটি করছেন। তাদেরকে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হবে। নিরাপত্তা সামগ্রীর বিষয়ে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই নিজস্ব উদ্যোগে তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা.খাইরুজ্জামান জানান, প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা সেবা ও করোনা রোধে সচেতন করতে নানা ভাবে তৎপর রয়েছে মাঠপর্যায়ের এই স্বাস্থ্য কর্মীরা। এ মুহুর্তে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরী ভাবে তাদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার ইকুইপমেন্ট সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এফএ/এসআর |