করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন করতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অলিগলিতে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিশ্বের বিভিন্ন মতো বাংলাদেশেও তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এটা তৃণমূলপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি।
এ কাজে দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের নেতাকর্মীসহ তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের করোনা প্রতিরোধে করণীয় ও পরামর্শমূলক লিফলেট তুলে দিয়েছে দলটি। এছাড়াও পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা জনসমাগম না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগ মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এর আগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ অস্বস্তি তৈরি করেছিল। সেই পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাও মোকাবেলা করা সম্ভব।
এ জন্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তৃণমূলপর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় জোরালো প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আর দলীয়ভাবে আপাতত লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হবে।
তাদের মতে, যেহেতু এখনো করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, তাই এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচতে বিকল্প হিসেবে দেশবাসীর মধ্যে জনসচেতনামূলক কর্মসূচি পালন করা প্রয়োজন। এর আগে একইভাবে দেশজুড়ে চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে মাঠে নেমেছিল সরকারি দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগের হাতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতনতামূলক লিফলেট তুলে দেয়া হয়েছে। দলটির সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে প্রতিদিনই রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল আগামী ১৭ মার্চ। বড় ধরনের জনসমাগম করার প্রস্তুতি প্রায় শেষপর্যায়ে ছিল। কিন্তু দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। জনগণের কথা বিবেচনা করে কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তা ছাড়া এমন ধরনের বড় কর্মসূচি এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
জনসভা বা আলোচনা সভার মতো কর্মসূচি পরিহার করে ডিজিটাল প্রচারণা, টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করা হবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোকে রঙিন সাজে সাজানো হবে। আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোতেও সাজসজ্জার পাশাপাশি থাকবে আলোকসজ্জা। সর্বশেষ গত সোমবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং মুজিবনগর দিবসে আলোচনা সভা ও জনসভার মতো কর্মসূচি পালনে বিরত থাকবে দলটি। তবে দিবস দুটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কাছে জনসচেতনতামূলক লিফলেট তুলে দেয়া হয়েছে। সেগুলো রাজধানীতে বিতরণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে জেলা-উপজেলায় ওই লিফলেট বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতন থাকার বিকল্প নেই। জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বড় ধরনের জনসমাগমও পরিহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অতীতের মতো এ সঙ্কটও আমরা মোকাবেলা করবো, ইনশা আল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাস এশটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতা আমাদের চেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেনি। আমাদের দেশে সরকার সময়োচিত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ১০০টি দেশ আক্রান্ত হওয়ার পর আমাদের দেশ আক্রান্ত হয়েছে। মাত্র তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আজকে এই বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় রাজনৈতিক বাদানুবাদ না করে বরং সবার একযোগে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা প্রয়োজন। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, করোনা ভাইরাস এটা বৈশ্বিক সঙ্কট। এ পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে ভীত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। এ ভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার সব হাসপাতালে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোও প্রস্তুত রয়েছে।
এইচএস