গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া-বারতোপা সড়কের বেলচালা নামক স্থানে সালদহ নদীতে সেতুর অভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে আশপাশের ৭টি গ্রামের হাজারো মানুষ। সেতুর অভাবে গ্রামগুলোর উন্নয়নও থমকে রয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের বেলচালা ও কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কড়িচালা গ্রামে বারতোপা বাজার-ফুলবাড়িয়া সড়কটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সালদহ নদী। এই সড়ক দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনে শ্রীপুরের বেলচালা, চিলমারি, জয়নাতলী ও কালিয়াকৈরের কড়িচালা, ফুলবাড়ীয়া, রামপুর ও মরিচের চালা গ্রামের হাজারো মানুষ যাতায়াত করে থাকে।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মিত না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বছরের পর বছর স্থানীয়রা এখানে একটি সেতুর দাবী জানালেও কারো গোচরে আসছে না তা। তাই এখন স্থানীয়দের বর্ষায় ভরসা নৌকা আর বর্ষা শেষে নদী পাড় হতে হয় পায়ে হেঁটে।
বেলচালা গ্রামের কৃষক ইরফান আলীর ভাষ্যমতে, বারতোপা বাজার-ফুলবাড়ীয়া সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। আশপাশের লোকজনের ব্যবসা বানিজ্য, কৃষিসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন এপাড় ওপাড়ে গমন করতে হয়। সেতুর অভাবে এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। বর্ষা আসলে দুর্ভোগের চিত্রটা যেন আরো বাড়ে। বিশেষ করে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের।
তিনি আরো জানান, তারা এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছেন স্বাধীনতার পর থেকেই। প্রতিবার নির্বাচন আসলে সেতুর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, পরে সবাই তা ভুলে যায়।
সেতুর অভাবে বিচ্ছিন্ন শ্রীপুর ও কালিয়াকৈরের কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিতে হয় ফুলবাড়ীয়ার আক্কেল আলী উচ্চবিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুমী আক্তারের ভাষ্য মতে, তার বাড়ী বেলচালা গ্রামে। তার ও তার পাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী প্রতিদিন নদী পাড় হয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। সেতু না থাকায় বর্ষাকালে ভোগান্তি বেড়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা কলাগাছের ভেলা বা ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে তাদের পাড় হতে সহায়তা করে থাকেন। তবে বর্ষা শেষ হলে নদীর পানি প্রবাহ কম থাকায় হেঁটেই পাড় হওয়া যায়।
স্থানীয় চিলমাড়ী গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আহমেদ আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেলচালা নামক স্থানে সেতু নির্মাণের জনদাবী করলেও কারো দৃষ্টিগোচর এখনো করা যায়নি। আমাদের দুর্ভোগ লাগবেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এভাবে আমাদের উপেক্ষিত করে উন্নয়ন বঞ্চিত রাখলে কিভাবে হবে “আমার গ্রাম আমার শহর”।
মাওনা ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য রুস্তম আলী বলেন, একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে কয়েকটি গ্রাম। সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নচিত্র থমকে রয়েছে। সেতুর অভাবে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয় বৃদ্ধ, শিশু ও বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের। গ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে একটি সেতুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেতুর অভাবে বছরের পর বছর গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় গ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্থবিরতা বিরাজ করছে। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে একাধিকবার তাগাদা দিলেও তারা এখনো সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের গাজীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক জানান, দু’পাশে সড়ক থাকার পরও সেতু নির্মাণ না হওয়া দুঃখজনক। দ্রুতই সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জনদুর্ভোগ লাগবে সংযোগ স্থলে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এইচএস