For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

ফাইনালের আগেই বোনের মৃত্যু! বুকে শোকের ক্ষত নিয়েই চ্যাম্পিয়ন আকবর

Published : Tuesday, 11 February, 2020 at 6:35 PM Count : 650

৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে এখন শুধু আবেগের মাখামাখি। ছেলে বুড়ো আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মুখে মুখে বাংলাদেশের যুবাদের নিয়ে প্রশংসার বান ছুটছে। আর হবেই না বা কেন স্বাধীনতার পর এত বড় অর্জন যে দেখেনি বাংলাদেশ! অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শক্তিশালী ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। আকবর আলিদের সৌজন্যে এখন থেকে বাংলাদেশের আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শব্দটিও বসানো যাবে।

কিন্তু বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করার নেপথ্যে যিনি বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সেই আকবর আলির বাড়িতে আনন্দ যেন একটু কমই। বিশ্বকাপ চলাকালিনই গত ২২ জানুয়ারি যমজ সন্তান প্রসব করতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের একমাত্র বোন মারা যান। পরদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখে সেই খবর দেওয়া হয়নি আকবরকে। পাছে যদি আবার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশ অধিনায়ক দেশে ফিরে আসেন-এই ভয় ছিল পরিবারের। কিন্তু বোনের এমন করুণ মৃত্যুর খবর পরিবারের দেওয়ার আগেই পেয়েছিলেন আকবর। এনিয়ে পরিবারের সঙ্গে তাঁর একটু অভিমানও হয়েছিল।

সে কথাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধিকে বলছিলেন আকবরের বড় ভাই মুরাদ হোসেন, “আমরা ওকে খবরটা দিতে চাইনি। ও খেলছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। ওখানে তো আমাদের পরিবারের কেউ নেই। আর ও বোনকে খুব ভালোবাসত। খেলা বাদ দিয়ে যদি দেশে আসতে চায়! পরিবারের সবাই মিলে তাই আমরা ওঁকে না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”  তবে সেই খবর চাপা থাকেনি। মুরাদ বলছিলেন, “কীভাবে যেন ও জেনে গিয়েছিল। পরে ফোন করে আমাদের কাছে অভিমান উগরে দিয়ে জানতে চেয়েছে, আমরা কেন তাঁকে জানালাম না।”

বড় বোন না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর আগে ছোট ভাইয়ের দুটো ম্যাচের খবর নিতে পেরেছিলেন। গ্রুপ পর্বে সেই দুটি ম্যাচে অনায়াসেই জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। মুরাদ বলছিলেন, “আমার বোনটা আকবরের এই কীর্তিটা দেখে যেতে পারল না। ওর এই জায়গায় আসার পেছনে আমার বোনেরও অবদান আছে। ম্যাচ দেখতে পারেনি। তবে গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচের স্কোরকার্ড ওকে দেখিয়েছিলাম।”
ভারতের ১৭৮ রান ধাওয়া করতে নেমে ১০৬ রানে বাংলাদেশের ৬ উইকেট পড়া দেখে আকবরের মা শাহিদা বেগম টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে গিয়েছিলেন। তখন গোটা বাংলাদেশের মনেই সংশয়, বাংলাদেশ পারবে তো? আকবরের মা বসে পড়েন সর্বশক্তিমানের কাছে, ছেলের আর দলের মঙ্গল প্রার্থনায়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে শাহিদা বেগম সেই টেনশন মূহুর্তের কথা উল্লেখ করে বলছিলেন, “কদিন আগে মেয়ে হারানোর শোক ভুলতে পারছিলাম না। এই বয়সে মেয়েটা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আকবর বাংলাদেশকে জিতিয়ে আমাদের পরিবারের শোক ভুলিয়েছে। মাঝখানে যখন উইকেট যাচ্ছিল তখন খুব খারাপ লাগছিল। আমি তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম।”
এক নিঃশ্বাসে আকবরের মা বলে চলে ছিলেন, “দোয়ায় বসে আল্লাহকে ডেকেছি আর বলেছি, তুমি আমাদের সহায় হও। আমার ছেলে যেন বাংলাদেশের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে।” শেষ অবধি তাই হয়েওছে! আকবর অপরাজিত ৪৩ রান করে বাংলাদেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে তবেই মাঠ ছেড়েছেন। মৃত্যুশোকের মাঝেও এই জয়ে পরিবার আবেগে, কান্নায়, অভিমানে একাকার হয়ে গিয়েছে।

আপাতত বাংলাদেশ আকবর-বরণে প্রস্তুত হচ্ছে। আকবরকে ঘিরে রংপুর শহরটাই যেন আনন্দের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বড় ভাই মুরাদ বলছিলেন, “ও এলে আমরা তিন ভাই-ই ঢাকায় যাব রিসিভ করতে। আর রংপুরে এলে কিভাবে রিসিভ করবে সবাই ভাবছে। এটা নিয়েও পাড়ার বড় ভাইরা আলোচনা করছে। তাছাড়া রংপুরবাসী কিভাবে তাঁকে রিসিভ করতে চায় সেটাও একটা ব্যাপার। এগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন সকলে।”

মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে জেতানোয় আকবর আলির সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির। কিন্তু আকবরের পছন্দের ক্রিকেটার কিন্তু ধোনি নন, এবি ডি ভিলিয়ার্স। মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রিকে দেখেই বাইশ গজে অনুপ্রেরণা খোঁজেন উঠতি প্রতিভা। 

মুরাদ বলছিলেন, “ওর প্রিয় ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স। সবসময় ওকেই ফলো করে। ওর সবকিছুই আকবর পছন্দ করে।” ডি ভিলিয়ার্সের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রিয় তারকার দেশ থেকে দেশবাসীর জন্য ইতিহাসই নিয়ে আসছেন আকবর।

এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft