সরকারি নীতিমালা অমান্য করে বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার। রাস্তার পাশে রেখে, ওষুধের ফার্মেসী, পান, সিগারেট, মুদি-মনোহরী ও কাপড়ের দোকানেও এসব দাহ্য পদার্থ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে অবাধে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের একাধিক হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পৌর শহরের বড় বাজারগুলো ছাড়াও অলিতে-গলিতে এখন পাওয়া যাচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। বাসষ্ট্যান্ড, বাজার এলাকা, বিবিচিনি, বেতাগী সদর, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, কাউনিয়া, কাজিরহাট, জলিশা বাজার, নীলখোলা, আমড়াগাছিয়া বাজার, ডিসিরহাটসহ দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রকার দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। অথচ এ উপজেলায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৩৪ ব্যবসায়ীর। গত দুই বছরে উপজেলায় ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময় তিনজন আহত হয়েছে এবং কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বেচাকেনা বেড়েছে।
আইনানুযায়ী জানা যায়, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করতে হলে একজন ব্যবসায়ীকে সরকারি বিধি মোতাবেক কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা সংক্রান্ত ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী এসব শর্ত পূরণ করলেই এলপি গ্যাস বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। লাইসেন্স ছাড়া কোন দোকানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না।
এলপি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ ও বিক্রি করতে বিস্ফোরক লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। খুচরা বিক্রেতার লাইসেন্সধারী কোন দোকানি ৪০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করতে পারবেন না। বেশিরভাগই লাইসেন্স ছাড়াই সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। লাইসেন্সবিহীন অবাধে এলপি সিলিন্ডার বিক্রি হলেও এখন পর্যন্ত কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। অবৈধ ভাবে এলপি গ্যাস বিক্রি রোধে এখন দেশব্যাপী অভিযান শুরু হলেও বেতাগীতে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি।
লাইসেন্সধারী এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা মিনি মাইক ট্রেডার্সের মালিক মো. সাইলু বলেন, ‘অধিকাংশই লাইসেন্সের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ব্যবসার প্রসার ঘটছে।’
বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের শেল ট্রেডার্সের মালিক অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের বিস্ফোরক পরিদফতর থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক।’
এ বিষয়ে বরগুনা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট বিমান কান্তি গুহ বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী, সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোন কাজ করলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।’
বেতাগী উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া যারা ব্যবসা করছে তাদের আমরা লাইসেন্স করতে বলেছি। এছাড়া ডিলারদেরও খুচরা বিক্রেতাদের লাইসেন্স দেখে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বলা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন, ‘বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া এলপি গ্যাস সিলিন্ডার যারা বিক্রি করছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
-এসকেডি/এমএ