'কেউ হামাক একটা কার্ডের ব্যবস্থা করে দিলো না'
Published : Tuesday, 21 January, 2020 at 4:06 PM Count : 534
‘হামার (আমার) বয়স এখন পোরায় (প্রায়) ৯০। ৩ বছর থ্যাকা (থেকে) হামি (আমি) মেম্বার চিয়ামিনের (চেয়ারম্যান) কাছে ঘোরোচি (ঘুরছি)। কোন কাম (কাজ) হয়নি। কেউ হামাক (আমাকে) একটা কার্ডের ব্যবস্থা করে দিলো না। কত বছর বয়াস (বয়স) হলে কার্ড হয়? কার কাছে গেলে হামার একটা কার্ড হবে? হামার জন্য একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দ্যান, বুড়া বয়াসে হামি (আমি) এনা শান্তি পাই। আল্লাহ তোমাকেরে (তোমাদের) ভালো করবে।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামের মৃত আছির উদ্দিন মোল্লার স্ত্রী আবিয়া বেওয়া।
বয়স ৯০ বছরের কাছাকাছি। তারপরও পাননি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড। স্বামীহারা এই বিধবা বৃদ্ধা বয়সে অর্থের অভাবে ভুগছেন নানা সংকটে। বয়সের ভারে ও রোগশোকে তিনি ভারাক্রান্ত। চিকিৎসা তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোও তার জন্য কষ্টসাধ্য।
বৃদ্ধা বয়সে বেঁচে থাকার তাগিদে আবিয়া বেওয়া একটি বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্য ঘুরছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে। শুধু আশ্বাসই মেলে। ৩ বছর ঘুরেও কেউ তাঁর জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেননি।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২, আর পুরুষের সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী আবিয়া বেওয়া বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।
প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় এক যুগেরও অনেক আগে অর্থ সংকটের কারণে চিকিৎসার অভাবে স্বামী আছির উদ্দিন মোল্লা মারা যান। গরীব স্বামীর সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না। ১৯৭১ সালের আগে জন্ম নেয়া তার পঞ্চাশোর্ধ বয়সের ৩ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় সন্তান এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান প্রায় দুই যুগ আগে। পেটের তাড়নায় অন্য ছেলে-মেয়েরা যে যার মতো দিনমজুর ও শ্রমজীবী কাজের মাধ্যমে ক্ষুধা নিবারণে ব্যস্ত।
এক সময় কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে আবিয়া ছাগল পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না। তাই মাঝে মধ্যেই তাকে না খেয়ে থাকতে হয়।
আবিয়া বেওয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগে তিনি চেয়ারম্যানকে তার ছবি ও আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছিলেন। অফিস থেকে বলা হয়েছিল যে তার কাজ হয়ে গেছে। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই টাকা পাবেন। এক বছর পরেও কোন টাকা না পেয়ে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান আবারও কাগজ চাইলে তিনি সেবারও কাগজ দিয়েছিলেন। এখন ২ বছর পেরিয়ে ৩ বছর হতে চললো তবুও তিনি কার্ড পাননি।
এতো বছর বয়সেও তার কোন কার্ড হয়নি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫ নং গনেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল বলেন, আবিয়ার কোন কার্ড করা হয়নি। তবে পুনরায় কাগজপত্র জমা দিলে আমি তার একটা কার্ড করে দেব।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হালিম বলেন, আবিয়া বেওয়া মান্দা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
-এসএ/এমএ