অটিস্টিক বিদ্যালয়ের জন্য অর্থসংগ্রহে মার্কেটে শিক্ষকরা
Published : Friday, 17 January, 2020 at 8:56 PM Count : 622
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছেন। দায়িত্ব নিচ্ছেন তাদের দেখ-ভালের। ঠিক সেই সময়ে এসে রাজশাহীর একটি প্রাচীন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অটিস্টিক শিশুদের বিদ্যালয় রক্ষা করতে অর্থসংগ্রহের জন্য মার্কেটে মার্কেটে ঘুরতে হচ্ছে শিক্ষকদের।
নিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠানটি এতদিন ভাড়া বাসায় চলছিলো। তবে মূল ভবন না থাকায় এখন ভবন নির্মাণে অর্থ সংগ্রহে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরই মাঠে নামতে হয়েছে। রাজশাহীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ভবন নির্মাণে দেননি কোনো অর্থ সহযোগিতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়টি ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২০০০ সালে বিদ্যালয়টি সরকারের নিবন্ধিত হয়। ২০১০ সাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন ও শিক্ষার্থীরা ভাতা পান। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৮০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। ছয়জন শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের মোট স্টাফ ১০ জন। জাতীয় পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পেয়েছে পুরষ্কার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থার সহযোগিতা চলে আসছে বিদ্যালয়টি।
৪০ বছরের পুরাতন এই বিদ্যালয় এতদিন মহানগরীর বিভিন্নস্থানে ভাড়া বাসায় চলছিলো। বর্তমানে মহানগরীর পঞ্চবটিতেই বিদ্যালয়টি ভাড়া বাসায় চলছে। বাসার মালিক নামমাত্র ভাড়ায় প্রতিষ্ঠানটি ১৫ বছর ধরে চালাতে দিয়েছেলো। তবে বেশ কিছু দিন ধরে তিনি অন্য জায়গায় স্থান খুঁজে নিতে বলছেন। তাই এতজন শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা।
তবে আশার বিষয় হলো, এরমধ্যেই পঞ্চবটিতেই অন্য একজন ব্যক্তি বিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করায় সেখানেই তারা নতুন ভবন নির্মাণ করছেন। তারা ইতিমধ্যে সাতটি কক্ষের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দেওয়ালও তুলেছেন। এখন শুধু ছাদ ঢালাইয়ের বাকি। তারা এইজন্য রাজশাহীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। ভবন নির্মাণে অর্থ সহযোগিতার বারবার আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ অর্থ দেননি। তাই ভাড়া বাসাওয়ালার চাপে নতুন ভবনের ছাদ নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেরাই অর্থ সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার তারা মহানগরীর আরডিএ মার্কেটে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুর নাহার আভা বলেন, বিদ্যালয়টির ৪০ বছরের পুরনো হলেও বিদ্যালয়ের কোনো নিজস্ব ভবন নেই। তখন থেকেই বিদ্যালয়টি ভাড়া বাসায় চলছে। এত শিক্ষার্থী নিয়ে বারবার বাসা পরিবর্তনও করা যায়না। এইবার পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে ভাড়া বাসাও পাওয়া যাচ্ছে না। ভবন নির্মাণের জন্য রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেকবার গেছে। তারাও আশ্বাসও দিয়েছেন অর্থ সহযোগিতার। কিন্তু অর্থ দেননি।
তিনি আরো বলেন, একজন ব্যক্তি তার জমিতে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়ায় আমরা নিজেরা ও বিভিন্নজনের কাছে অর্থ সংগ্রহ করে দেওয়াল পর্যন্ত তুলেছি। এখন ছাদ নির্মাণের বাকি রয়েছে। এদিকে ভাড়া বাসার মালিকও তাদের বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছে। আর তার বাসা আমাদের অনেক দিন ব্যবহার করতে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়েই প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক কল্পনা রায় ভৌমিকসহ আমরা শিক্ষকরা অর্থ সংগ্রহের জন্য মার্কেটে মার্কেটে যাচ্ছি।
প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক কল্পনা রায় ভৌমিক বলেন, এই বিদ্যালয়টি আমরা তিলে তিলে গড়ে তুলেছি। এখন থেকে অনেক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিরা শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠেছে। আমি ২০১৩ সালে অবসরে গেছি। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিনা বেতনে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছি। শুধুমাত্র এই শিশুদের প্রতি ভালোবাসা থেকে। এই স্কুলের প্রতি ভালোবাসা থেকে। এত পুরাতন বিদ্যালয় হলেও বিদ্যালয়টির নিজস্ব ভবন নেই। কোনো জনপ্রতিনিধিরাও কোনো সহযোগিতা করেননি। তাই আমরা নিজেরা ও বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়েই লিনটন ঢালাই পর্যন্ত করেছি। এখন ছাদ ঢালাইয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য নেমেছি।
আরএইচএফ/এইচএস