পাখির কলতানে মুখরিত জবই বিল
Published : Thursday, 16 January, 2020 at 3:10 PM Count : 718
ভারত সীমান্তঘেষা নওগাঁর সাপাহার উপজেলা। ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার এই উপজেলায় উৎপাদিত সুস্বাদু আমের খ্যাতি দেশজুড়ে। এই উপজেলার আরেকটি ঐতিবাহী দর্শণীয় স্থান হলো জবই বিল।
শীত এলেই এই ঐতিহ্যবাহী জবই বিল পরিযায়ী (অতিথি) পাখিসহ নানা রকমের পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতে সুদুর রাশিয়া, সাইবেরিয়াসহ বিশ্বের শীত প্রধান দেশ থেকে শত শত পাখি এসে ভীড় জমায় এই বিলে। আর এসব পাখির আগমনে জবই বিল তার নিজ সৌন্দর্য্যের বিকাশ ঘটায়। প্রতিনিয়ত এই অতিথি পাখিসহ নানা জাতের নানা রকমের পাখি দেখার জন্য নওগাঁ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শণার্থীরা এখানে ভীড় জমান।
জেলা সদর থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সীমান্তবর্তী এই উপজেলা সাপাহার। সাপাহার উপজেলার শিরন্টি ইউনিয়নে অবস্থিত এই জবই বিল। সাপাহার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে জবই নামক স্থানে প্রায় হাজার একর জমির ওপর অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী বিল। পর্যটকদের অবস্থানের জন্য সাপাহার সদরে রয়েছে মানসম্মত আবাসিক হোটেল। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পথে কোন দুর্ভোগ পোহাতে হয়না।
বিদেশ থেকে আগত পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজা হাঁস, বালি হাঁস, পাতি কূটসহ দেশী জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ী, ছন্নি হাঁস বিল এলাকা মুখরিত করে তুলছে। অতীতে এক শ্রেণীর মানুষ অবাধে বিল থেকে এসব অতিথি পাখি শিকার করে হাটবাজারে বিক্রি করত। এমনকি গত বছরও এলাকার কতিপয় ব্যক্তি এ বিল থেকে বেশ কিছু পাতি সরালি হাঁস ফাঁদ পেতে ধরে বিক্রি করার সময় জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্যগণ তাদের হাতে নাতে ধরে ফেলেন। পরে ওই পাখি শিকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি প্রদান করা হয়। এরপর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কঠোরতা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের জোরালো নজরদাড়িতে বিল এলাকায় পাখি শিকার বন্ধ রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে হরেক রকম পাখির আগমনে পুরো বিল এলাকা এখন পাখির কলতানে মুখরিত।
বেশ কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার কিছু উৎসাহী যুবক জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন তৈরী করে বিলে অতিথি পাখিসহ সব ধরনের পাখি শিকার বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া বিলে কোন কচুরিপানা না থাকলেও সরকারি ও বেসরকারি ভাবে মৎস্যজীবীরা খরা মৌসুমে বিলের পানি শুকিয়ে গেলে মা মাছ রক্ষায় বিলের মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় বাঁশ, কাঠ ও কিছু কচুরিপানা দিয়ে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলে।
জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, বর্তমানে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের প্রচেষ্টা ও স্থানীয় মৎসজীবীদের তৈরীকৃত কচুরিপানার কাঠা থাকায় অতীতের মত আবারও ধীরে ধীরে শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশী পাখিরা অবাধে বিলে আসতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে বিলের বিশাল অংশে কচুরিপানা দিয়ে মাছসহ পাখিদের বড় ধরনের অভয়াশ্রম এবং বিলের বিভিন্ন দ্বীপগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে বনাঞ্চল তৈরী করলে সারা বছর বিল এলাকায় পাখিদের আনাগোনায় জবই বিল আবারও ফিরে পেত তার ঐতিহ্য ও নাব্যতা।
বিল পাড়ে পর্যটকদের জন্য ঘোরাফেরা ও বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে ভবিষ্যতে সাপাহারের জবই বিলটি এই এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিতে পারে বলেও অনেক পর্যাটকসহ এলাকাবাসীরা জানান।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাপাহার উপজেলার জবই বিলটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী বলেন, পূর্বে জবই বিল নানা সমস্যায় জর্জড়িত থাকলেও সবার সার্বিক সহযোগিতায় বর্তমানে জবই বিল পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার বিনোদন স্পটে পরিণত করা হয়েছে। তবে একটি আধুনিকমানের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। আশা রাখি জবই বিলকে ঘিরে গৃহীত এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হলে এটি একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে। এছাড়া শীত মৌসুমে এই বিলে জড়ো হওয়া অতিথি পাখিসহ নানা রকমের পাখি দেখতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
-এমএ