বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনায় শ্রমিকদের দ্বিতীয় দফার ‘আমরণ অনশন’ দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার খুলনার খালিশপুরের দৌলতপুর জুটমিল ও দিঘলিয়ার স্টার জুটমিলের শ্রমিকরা বিআইডিসি রোডের প্লাটিনাম গেইটের পূর্ব পাশে এবং প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিকদের মিলের পশ্চিম ফটকে সামিয়ানা টাঙিয়ে অনশন করতে দেখা যায়।
এছাড়া, ক্রিসেন্ট জুটমিল গেইট, খালিশপুর জুটমিল গেইট, আটরা শিল্পাঞ্চলের আলিম ও ইস্টার্ন জুটমিলের শ্রমিকরাও তাদের মিলগেইটে এ কর্মসূচি পালন করেছেন। পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রেখে খালিশপুর বিআইডিসি রোড, আটরা ও রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়কে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রোববার দুপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে দ্বিতীয় দফায় স্ব স্ব মিল গেইটের সামনের সড়কে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তারা। খুলনা ছাড়াও রাজশাহী ও নরসিংদীতে শ্রমিকরা এ অনশন করছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। প্রথম দফার অনশনে দেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলের মধ্যে ১২টির শ্রমিকরা যোগ দেয়।
আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, রোববার দুপুর থেকে অনশনে বসেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে মৃত্যু হলেও অনশন ভাঙব না। শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তিন দিনের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। ওই রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি ১৫ ডিসেম্বর শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেলে বিজেএমসি সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সভার কথা জানান। ওই সভা থেকে ভালো ফলাফল আসতে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের অনশন তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বলেন।
এ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। রাতে তারা বাড়ি ফিরলেও অনশনস্থলের প্যান্ডেল সেভাবেই রাখা হয়। ১৪ ডিসেম্বর থেকে খুলনা অঞ্চলের সকল পাটকলের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরে শ্রমিক নেতাদের কাছে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়।
ওইদিন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ভালো কোনো ফল হয়নি। ওই বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশনের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে আবারও আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ১০ ডিসেম্বর দুপুরে প্রথম দফায় ‘আমরণ অনশনে’ বসে তারা। ওই কর্মসূচিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের মধ্যে আটটি ক্রিসেন্ট জুটমিল, খালিশপুর জুটমিল, দৌলতপুর জুটমিল, প্লাটিনাম জুটমিল, স্টার জুটমিল, আলিম জুটমিল, ইস্টার্ন জুটমিল ও জেজেআই এর শ্রমিকরা আন্দোলনে অংশ নেন। যশোরের কার্পেটিং জুটমিলের শ্রমিকরা এ কর্মসূচিতে যোগ দেননি।
পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন ২৬টি পাটকলের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি নন-জুট। মিলস ফার্নিশিংস লিমিটেড নামের নন-জুট কারখানা ছাড়া বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠান লোকসানে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিজেএমসির পাটকলগুলোর (জুট ও নন-জুট) লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৮১ কোটি টাকা।
-এমএ