মরিচের পাতা কুঁকড়ানো রোগলোকসানের মুখে দুই শতাধিক কৃষক |
![]() কাঁচা মরিচের পাতা কুঁকড়ানো রোগে লোকসানের মুখে পড়েছেন মানিকগঞ্জের দুই শতাধিক চাষী। সম্প্রতি এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মরিচ ক্ষেত। এতে করে এ বছর মরিচের উৎপাদন খরচ উঠানোই দায় হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মরিচ চাষীদের। কৃষকদের অভিযোগ, এমন দুর্দিনে পাশে নেই কৃষি কর্মকর্তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের উকিয়ারা, গড়পাড়া ইউনিয়নের রানাদিয়া, গোসাইনগর, বিশ্বনাথপুর ও বাঙ্গলা, সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়নের সলাইগোবিন্দপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মরিচ ক্ষেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ে মারা যাচ্ছে গাছ। সদর উপজেলার গড়াপাড়া ইউনিয়নের রানাদিয়া গ্রামের কৃষক লতিফ মিয়া জানান, এ বছর তিনি ২৫ শতাংশ জমিতে মরিচের আবাদ করেছিলেন। গত ১৫ দিনে তার মরিচ ক্ষেত পাতা কুঁকড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। অগ্রাহায়ণ মাসে রোপণ করা এই মরিচ চৈত্র মাস পর্যন্ত তোলা যায়। মরিচের আবাদে তার খরচ হয়েছিল ১২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত তিনি ৪ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। এই রোগে তার পুরো ক্ষেতের মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছর এই ক্ষেত থেকেই ৫০ হাজার টাকা মরিচ বিক্রি করেছিলেন তিনি। এ বছর পুরো লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। বাঙ্গলা গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম জানান, গত বছর ৩০ শতাংশ জমিতে মরিচের আবাদ করেছিলাম। ভাল ফলন পাওয়ায় এ বছর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আরও ২০ শতাংশ জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। কিন্তু এবার পুরো মাথায় হাত। রানাদিয়া গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, এবার মরিচের আবাদ করে পুরোটাই লোকসান। পাতা কুঁকড়ানো রোগের ঔষধ দিয়েও কিছু করা যাচ্ছেনা। সাটুরিয়ার তিল্লি ইউনিয়নের সলাইগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া জানান, আমাদের কৃষকদের মাঝে এখন চরম হতাশা কাজ করছে। আমাদের এমন দুর্দিনে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। তারা আমাদের কোন খোঁজও নেয়নি। স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতা মো. ফরিদ হোসেন বলেন, প্রতি বছরই মরিচ ক্ষেতে পাকা কুঁকড়ানো রোগ দেখা দেয়। সেটা খুব সামান্য কিন্তু এ বছর এর পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ। সানমেট্রিট, কুমুলাক্স, রিবলেল, ক্যাব্রিয়টন, ইমিটাপ ওষুধ দিয়েও এবার রোগ সারানো যাচ্ছেনা। এবার কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন সরকার জানান, গড়পাড়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী আরও কয়েকটি ইউনিয়নের মরিচ ক্ষেত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এতে দুই শতাধিক কৃষক অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতার দাবি জানান তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ১০০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন চাষীরা। এটি বীজ ও মাটি বাহিত ভাইরাস রোগ। আক্রান্ত গাছগুলিকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে অন্যত্র মাটিতে পুতে ফেলতে হয়। কিন্তু এবার এর ব্যাপকতা একটু বেশি। তিনি আরও বলেন, কৃষকরা তাদের পরামর্শ অনেক সময় নিতে চায়না। কৃষকদেরকে বলা হয়েছে একই জমিতে বার বার একই ফসল আবাদ না করার জন্য। কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক জায়গায় মাঠ পর্যায়ে আমাদের জনবল পর্যাপ্ত নেই। তারপরও আমারা সাধ্যমত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। -এএএল/এমএ |