একদিনে চাঁদপুর ভ্রমণ |
![]() আজ থেকে বিশ বছর পর আপনি এই ভেবে হতাশ হবেন যে, আপনার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তা করতে পারেননি। তাই নিরাপদ আবাস ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ুন। আবিষ্কারের জন্য যাত্রা করুন, স্বপ্ন দেখুন আর শেষমেশ আবিষ্কার করুন।-মার্ক টোয়েন। ৭ অগ্রহায়ন, শীতের আগমনী বার্তা। হুট করেই মাথায় ভূত চাপলো। কোথা থেকে ঘুরে আসা যাক। ভ্রমণ প্রেমী বন্ধু তাহমিদের সামনে আমার প্রস্তাবটি রাখলাম৷ বন্ধু তো আমার পাল তোলা নৌকায় বাতাস দিল। বললো চল যাই। তবে কোথায় যাব তা নিয়ে শুরু ভাবনা ভাবনার ঘোর ভাঙল যখন আমি বললাম ঢাকা নয়, ঢাকার বাহিরে একদিনে কোথায় যাওয়া যায়? বল? সে, তখন বলল চল যাই তাহলে চাঁদপুর। তারপর সব বন্ধুদের মুঠোফোনের মাধ্যমে ঝড়ো করলাম শুক্রবার সকালে আমরা যাবো চাঁদপুরের। সেই থেকে শুরু হল যত জল্পনা-কল্পনা। ![]() অবশেষ শুক্রবার চলে আসলো। রাতে কারো চোখে ঘুম নেই। মোটামুটি অনেকের এই প্রথম লঞ্চ জার্নি। তাও বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার বাহিরে ভ্রমণ। সকালে সাতটার মধ্যে সকলে আমরা সদরঘাট এ পৌঁছেছি এর মধ্যে যে বন্ধুগুলোর বাড়ি দূর তারা দেরি করে পৌঁছানোর কারণে আমরা সাড়ে ৮টার লঞ্চ ধরলাম। রওনা হলাম আমি রানী, তাহমিদ, সুপন, কাউসার, পরশ, সুস্মিত, সিয়াম। আমাদের লঞ্চ যখন কুয়াশা ভেদ করে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কতগুলো শহর, গ্রাম আর বন্দর নদী ফেলে, সে সুন্দর্যগুলো দেখছিলাম। এমন অপূর্ব দৃশ্য মন ভাবিয়ে দিয়েছে। অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলাম বিশাল বিশাল লঞ্চ আবার ছোট ছোট নৌকায় জেলেরা মাছ ও ধরছেন, লঞ্চের তীব্র ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছিল ছোট্ট নৌকাগুলো। তারপর শুরু হল গান লঞ্চ জার্নির পুরোটা জুড়েই ছিল গান৷ এমন কি আমাদের গানে ঝড়ো হয়ে যায় পুরো লঞ্চের যাত্রীরা। তবে সত্য বলতে হবে যে আমরা বেশ ভালোই গান করি। “শ্রাবনের মেঘগুলো ঝড়ো হলো আকাশে, অঝড় নামবে নাকি শ্রাবনের ধারাতে, আজ কেন মন উদাসিন হয়ে দূর অজানায় চায় হারাতে।” এ গানটি এখনো কানে বাঝছে। তারপর দীর্ঘ আড়াইঘন্টা জার্নি শেষ আমরা পৌঁছলাম চাঁদপুর লঞ্চঘাটে। ![]() আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল আমরা সবাই যেহেতু জার্নালিজমের স্টুডেন্ট সে ক্ষেত্রে আমাদের মোটামুটি একটা ছোটখাটো নেটওয়ার্ক থাকে। তারই সূত্র ধরে আমাদের এক বন্ধু আমাদের রিসিভ করতে আসলো তারপর আমরা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অটো নিয়ে সোজা চলে গেলাম চাঁদপুর সার্কিট হাউজে। এরপর একটু রেস্ট নিয়ে বের হলাম আমরা ইলিশের সন্ধানে। চাঁদপুর মানেই ইলিশের স্বর্গ রাজ্য। নদীর ঠিক কাছেই পেয়ে গেলাম একটি ইলিশ মাছের দোকান। গরম গরম ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত আহ.... অসাধারণ মুখে লেগে আছে এখনও। আগে শুনেছি, চাঁদপুর বলা হয় ইলিশের শহর। তবে আগে শোনা কথা সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম। ![]() এই শহরে আমি অচেনা, অচেনা সে আমার কাছে। তারপর চাঁদপুর ট্রুর এ আর কি কি দেখা যায় করা যায় তা নিয়ে শুরু হয়ে গেল ভাবনা। যেহেতু আমরা নদীর তীরবর্তী স্থানে ছিলাম তাই আমরা ট্রলার নিয়ে রওনা হলাম মিনি কক্সবাজার ঠিক বিশাল নদী চারদিকে শুধু পানি আর পানি তার মাঝে ছোট একটি মিনি কক্সবাজার আর ট্রলার জার্নিটা ছিল অসাধারণ আমরা মূলত শহরের ছেলে-মেয়ে পানি বা সবুজ পরিবেশের কাছাকাছি যাওয়া হয় না তেমন। ইট, পাথরের বড় হওয়া ছেলে-মেয়েদের কাছে পানি আর মিনি কক্সবাজার বেশ রোমাঞ্চকর মনে হয়েছিল। আবার শুরু হয়ে গেল হৈ হুল্লোড় পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি তারপর দেড় থেকে দুই ঘন্টার পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি শেষে। আবার ট্রলারে করে চলে আসলাম। ![]() যেহেতু আমাদের ডে ট্রুর ছিল কিন্তু চাঁদপুর ভ্রমণ এতটাই মজার ছিল যে ফেরার সময় আমাদের মন ভীষন খারাপ হয়ে গেল। তবে সবে মাত্র শুরু আরো অনেক ঘুরবো অপরূপ বাংলাদেশ দেখার এখনও অনেক বাকি বলে সবাই সবার মনকে শান্তনা দিলাম। তারপর সাড়ে ৬ টার লঞ্চ এ উঠে পড়লাম মজার ব্যাপার হল সারা সময় জুড়ে আমাদের সঙ্গে ছিল আমাদের চাঁদপুরের বন্ধু হৃদয় তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমরা। বন্ধুটি কে বিদায় দিয়ে লঞ্চ এ উঠলাম আমরা। তারপর আবার শুরু আমাদের হৈ হুল্লোড়। গান তবে এবার গানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শীতল বাতাস প্রচন্ড ঠান্ডা কাপাকাপি অবস্থা। তবে শীতটাও আমরা বেশ উপভোগ করেছি। চাঁদপুর যদিও পুরোটা একদিনে ঘুরে শেষ করা সম্ভব নয়, তবে গ্রামের গন্ধ, গ্রামের মেঠো পথ, মানুষের মুখের অমলিন হাসি ভুলবার মন নয়। বন্ধুদের সঙ্গে পুরো ট্রুর জুড়ে তৈরি হয়েছে নতুন সম্পর্ক নতুন বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বটা আরেকটু পাকাপোক্ত হল। জানা শোনা বাড়লো। |