আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ম জাতীয় কংগ্রেস শনিবার (২৩ নভেম্বর)। এর পরই পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন। শীর্ষ পদের নেতৃত্বে আসতে পদপ্রত্যাশীরা তদবির নিয়ে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। নানা উপায়ে প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসার চেষ্টা করছেন পদপ্রত্যাশীরা।
তবে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে এমন সৎ ও দলের দুঃসময়ে মাঠে থাকা নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন নেতৃত্ব।
এদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতা হিসেবে আলোচনায় এসেছে মাহবুবর রহমান পলাশের নাম। ওয়ান ইলেভেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই নেতা সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি কাজ করছেন প্রতিবন্ধীদের নিয়েও। এর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ৬ বার বাণিজ্য মেলায় পুরস্কারও পেয়েছেন।
মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, এই অংশের নতুন নেতৃত্বে মাহবুবর রহমান পলাশকে সভাপতি হিসেবে দেখতে চান মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
১৯৮০ সালে জন্ম নেয়া পলাশের শৈশব রাজধানীতে কাটলেও বেড়ে ওঠেন মুন্সিগঞ্জে। পলাশের রাজনীতিতে হাতেখড়ি বাবা মুহাম্মদ আ: ওয়াদুদ গোড়াপীর কাছ থেকে। যিনি ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প পোড়ানোর জন্য গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। প্রায় ৭ মাস বন্দি থাকার পর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পান।
রাজনৈতিক জীবনে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা এবং কলেজ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন পলাশ। বিকেবি ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি শাসকদের অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাননি এই ছাত্রনেতা। মুন্সিগঞ্জের মধ্যপাড়া বাজার এলাকায় অমানবিক নির্যাতনের পরে মৃত ভেবে ফেলে যায় তারা। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলেও পাঁচ টুকরা হয় মাথার খুলি। যেখানে ৩১টি সেলাই দেওয়া হয়। এলোপাতাড়ি নির্যাতনের ফলে শরীরের সব নার্ভ শুঁকিয়ে যায়। যার আমৃত্যু চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন তাকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কলকাতার এক নিউরোলজিস্ট।
মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান পলাশ ছাত্রলীগের রিপন-রোটন কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের মিরাজ-পলাশ কমিটির সদস্য ও শুভ্র-কবীর কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, ২০০৭ সালে মহানগর দক্ষিণ ছাত্র লীগের অন্যতম সভাপতি প্রার্থী ছিলেন তিনি। তবে বয়সের কারণে বাদ পড়তে হয় তাকে।
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিতর্কিত উপদেষ্টা কে এম হাসান মাহমুদ ও নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজ হটাও আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল পলাশের।
তিনি বলেন, যখন রাজনীতির অনেক রথি-মহারথীরা গা ঢাকা দিয়েছেন, তখন সূধাসদন থেকে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম তাকে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘দেশের এই দুঃসময়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’ সে সময় বিপাকে পড়েন পলাশ। তার মেধাবী বন্ধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিস্ট্রির ছাত্র খাইরুল, জিওগ্রাফির কাজী মহসীন মিঠু, বন্ধু মঈন, তমাল, বাটুল ও ছোট ভাই রিয়াজকে নিয়ে নেমে পড়েন রাজপথে। তখন তার চারজন বন্ধু গুরুতর আহত হন। তাদের প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে পুলিশের ভয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেন্ট্রাল হাসপাতালে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও চিকিৎসার খরচও প্রদান করেন। সুস্থ হওয়ার পর তাদেরকে নিয়ে সূধাসদনে যান, শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ, এপিএস ডা. আওলাদ, এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর।
বিভিন্ন সময় রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন মাহবুবর রহমান পলাশ। ১/১১ কিংবা কে এম হাসান মাহমুদ, এম এ আজিজ হটাও আন্দোলনে লগি-বৈঠা নিয়ে মিছিলে সক্রিয় ছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সর্বনিম্ন ৭ জনের মিছিলের তিনি ছিলেন একজন। মতিয়া চৌধুরী, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মেহের আফরোজ চুমকি, তহুরা বেগম, শাহিন মনোয়ারা, ফরিদুননাহার লাইলিকে প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের লাঠিচার্জ থেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজে আহত হয়েছেন পলাশ। আন্দোলনের সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ উপেক্ষা করে ছিলেন মিটিং-মিছিলের অগ্রভাগে। কিছুদিন আগেই যা ছিল তার অযোগ্যতা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানের ফলে এখন এটাই তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হয়ে সামনে এসেছে।
এছাড়া, সমাজের অটিজম শিশুদের সেবা করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের আদর্শ ও অনুপ্রেরণায়। শিক্ষা বিস্তারে রয়েছে তার আন্তরিকতা ও সংশ্লিষ্টতা। ইতোমধ্যে তিনি গুলিস্তান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের যুগ্ম সম্পাদক, মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক, বিএসএমইউ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের তিন বার অভিভাবক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কারাবন্দি অবস্থায় যখন তাকে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে, তখন তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন পলাশ। কারামুক্তির পর তিনি যখন উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন তখন পলাশ তার সঙ্গে প্রায় এক মাস অবস্থান করেন। সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগারে কারাবন্দি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা আইনজীবীরা ও অ্যাডভোকেট ডা. দীপু মনির (বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী) সঙ্গে দেখা হতো নিয়মিতভাবেই। সাইফুজ্জামান শিখরের নির্দেশে রাতের অন্ধকারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লিফলেট বিলি, দেয়ালে পোস্টার সাটানোর মতো কাজ এবং নীলক্ষেতের দোকান বাইরে থেকে বন্ধ করে প্রত্যেকটি গণমাধ্যমের কাছে ফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দিতেন পলাশ।
পলাশ মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ সভাপতি। পলাশ জানান, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করতে শিখেছি প্রিয় নেত্রীর কাছ থেকেই। কিন্তু পাওয়ার পার্টির অপব্যবহার, অনুপ্রবেশকারীদের দলে নেওয়া, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজী, দখলদারীত্ব নেত্রী আমাকে শেখাননি।
-এমএ