ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে মানুষ।
জেলা প্রশাসন বলছে, আটক হওয়া অনুপ্রবেশকারীরা জানায়, তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক। তারা কাজের জন্য ভারতে গিয়েছিলো।
অন্যদিকে, বিজিবি বলছে মাইগ্রেশন করে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের সেখানে বসবাসে অসুবিধা হচ্ছে। নানাভাবে তারা চাপের মধ্যে পড়েছেন। তাই তারা ফিরে আসছে। তারা বেশির ভাগ দুর্গম এলাকার ঠিকানা দিচ্ছেন।
ঝিনাইদহের মহেশপুরে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে কাঁটাতারবিহীন এলাকা রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার। এই এলাকা দিয়েই বেশি অনুপ্রবেশ করছে। আটক অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশেরই বাড়ি বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, মাদারীপুর কিংবা খুলনা এলাকায় বলে জানা গেছে।
বিজিবি বলছে, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেড়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলমান। এরা এনআরসি আতঙ্ক ও স্থানীয় নির্যাতনে দেশ ছেড়ে চলে আসছেন। তারা আর ভারতে যাবেন না বলে বিজিবির কাছে জানিয়েছেন। সহায়-সম্বল নিয়ে তারা এদেশে চলে এসেছেন। তাদের আটকের পর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এনআরসি ও নিপীড়ন আতংকের কারণে তারা চোরাই পথে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে।
বিজিবির তথ্যমতে, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের মাটিলা, লেবুতলা, মকধ্বরপুর, বাশবাড়ি, পলিয়ানপুরসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ভারতের বেঙ্গালুরু, কর্নাটক, উত্তর প্রদেশ ও আসামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০৩ জন অনুপ্রবেশকারী বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। গত ১৫ দিনে ৭৫ নারী, ৬৪ পুরুষ ও ৬৪ জন শিশুকে তারা আটক করেছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আটক করেছেন চারজনকে। এছাড়া চলতি নভেম্বরের ১৫ দিনে শুধুমাত্র মহেশপুর থানার মাধ্যমে ১৫৭ জন অনুপ্রবেশকারীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৩ নভেম্বর ৩৩ জন ও ১৪ নভেম্বর ৪৯ জনসহ মোট ৮২ জনকে আটক করেছে বিজিবি। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আটককৃতদের কেউ ২ বছর, কেউ ৫ থেকে ১০ বছর কেউবা তার অনেক আগে পাসপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল।
সীমান্তের লেবুতলা ও পলিয়ানপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, ভারত থেকে সব সময়ই মানুষ আসে। মাঝরাত্রি ও সকালের দিকে বেশি লোক ভারত থেকে দেশে আসে ইছামতি নদী পার হয়ে কাঁটাতারবিহীন এলাকা দিয়ে। তবে বিকালের দিকেও মাঝে মধ্যে লোক আসে। বিজিবি যে পাশে থাকে বিপরীত পাশে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে লোক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভারত থেকে এভাবে যদি লোক আসে সেটা তো আমাদের সমস্যাই।
সীমান্তের মাটিলা মসজিদের ইমাম নুরুননবী জানান, সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লোক আসে ভারত থেকে। অনেক সময় তারা সীমানা ক্রস করে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কেউ ধরা পড়ে কেউ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এরা মূলত এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে। তবে বিজিবি যে কয়েকজনকে আটক করেছে অনুপ্রবেশকারী তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এদেশে প্রবেশ করেছে।
বিজিবির হাতে আটক আদালতে সোপর্দ হওয়া কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী জানান, আমাদের কোন নাগরিকত্ব ছিল না। ভারতেও গিয়েছিলাম পাসপোর্ট বিহীন অবস্থায়। এখন দালাল ধরে চলে এসেছি। কারণ মালিকরা আমাদের টাকা পয়সা দেয় না।
এ বিষয়ে মহেশপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল আলম বলেন, যারা আটক হচ্ছে তাদের পরিচয় নিয়ে দেখা যাচ্ছে তারা বেশির ভাগ বাগেরহাট ও খুলনা এলাকার মানুষ। তারা দুই দশক ধরে ভারতে গিয়ে কাজ করছিলেন। সেখানে স্থানীয় ঝামেলায় পড়ে চলে আসছেন। বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে।
মহশেপুরের খালিশপুর বিজিবি ৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে জানান, মাইগ্রেশন করে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের সেখানে বসবাসে অসুবিধা হচ্ছে। নানাভাবে তারা চাপের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুর এলাকায় এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। যে কারণে তারা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, গত শনিবার থেকে প্রচুর পরিমাণে নারী-পুরুষ ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত অঞ্চলে আটক হচ্ছেন। ফিরে আসারা দাবি করছেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক। কারাগারে পাঠানোর পর তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে ছিল। ওখানে কোন বাসা-বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। সম্প্রতি ওখানে তাদেরকে কিছু লোকজন খোঁজ করছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল তারা তাদেরকে আর রাখতে পারবে না। তখন বাধ্য হয়ে তারা ভারতের দালাল ধরে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর বিজিবির হাতে আটক হচ্ছেন।
-জেইউআর/এমএ