For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি : একের পর এক আশ্বাস, প্রভাব নেই বাজারে

Published : Wednesday, 30 October, 2019 at 3:02 PM Count : 870

পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একের পর এক আশ্বাস দিলেও বাস্তবে বাজারে তার প্রভাব কবে পরবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ ক্রেতা ও বিক্রেতারা। দিন যত যাচ্ছে পেঁয়াজের বাজার ততই বাড়ছে। 

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা মঙ্গলবার বিক্রি হচ্ছে বাজার ভেদে ১৪০-১৫০টাকা। প্রতিদিন পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দাম বৃদ্ধি সম্মুখিন হচ্ছেন ক্রেতারা।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পায়। দাম বৃদ্ধির পর থেকে তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একের পর এক আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। তবে বাজারে এই আশ্বাসের কোন ফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা।

জানা গেছে, ভারত রফতানি বন্ধ করলেও মিয়ানমার ও মিসর থেকে আসছে পেঁয়াজ। এরপরও দাম কমছে না। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে। বৃষ্টির অজুহাতে শুক্র ও শনিবার দুই দফায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। ফলে আবারও পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রথম ধাপে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মিয়ানমার থেকে ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এছাড়া মিশর এবং তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। গোটা প্রক্রিয়া শেষ হলে দেশে পেঁয়াজের দাম হ্রাস পাবে। বাণিজ্য সচিবের এমন আশ্বাসের এক মাসের বেশি সময় পার হলেও দাম তো কমেই নি বরং বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, পেঁয়াজের দাম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। ভারত গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর ঋণপত্র (এলসি) খুলে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। মিসর ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আসছে।

দাম বৃদ্ধির প্রধম ধাপে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, 'মিয়ানমার থেকে ৪৮৩ টন পেঁয়াজ এসেছে। পেঁয়াজের দাম ৬০-৭০ টাকায় চলে আসবে। ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় এর প্রভাব পড়তে দেরি হওয়ার কথা থাকলেও দেরি হয়নি। দ্রুতই দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ ভারত থেকেই বেশি আসত। ভারতেও দাম বেশি বর্তমানে। ইতোমধ্যে টেকনাফ বন্দরে ৪৮৩ টন পেঁয়াজ ঢুকেছে। আরও ৪০০ থেকে ৫০০ টন ঢুকবে।'

পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে এবং বেশি লাভ করলে ৬০ টাকার বেশি দাম হওয়া উচিত নয়। কিন্তু পেঁয়াজকে সে দামে বেঁধে রাখতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।'

পরে গত রোববার (২৭ অক্টোবর) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন, 'আমি আশাবাদী এক সপ্তাহের মধ্যে মিশরের পেঁয়াজ চলে আসবে। যদি আসে তাহলে হয়তো আমরা ৮০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারবো। তবে কষ্টটা বোধ হয় আমাদের আরও একটা মাস করতে হবে। কারণ আমাদের নিজেদের পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ নেই।'

এদিকে, বিপুল পরিমাণ আমদানির তথ্য জানিয়ে মঙ্গলবার গণভবনের সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে পেঁয়াজের বাজার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দুই-চার দিনের মধ্যে দাম কমবে। বাজার সহনীয় করতে ইতিমধ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে এবং আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।'
 
তিনি আরও বলেন, 'আড়তদাররা পেঁয়াজ মজুদ করে সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।'

সরকারের পক্ষ থেকে এমন একের পর এক আশ্বাসে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, পেঁয়াজের দাম কমা নিয়ে সরকার এবং বাণিজমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একের পর এক আশ্বাস দিচ্ছেন, তবে তার কোন প্রভাব বাজারে নেই। যত আশ্বাস দেয়া হচ্ছে ততই দাম বাড়ছে। প্রতিদিনই পেঁয়াজের বাজার দর বাড়ছে।

খিলগাঁও বাজার থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছেন হাসিব নামের এক চাকুরিজীবী। অবজারভার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম এতো টাকা এর আগে কখনও দেখিনি। দিন যত যাচ্ছে দাম ততই বাড়ছে। গতকাল যা কিনেছি তার থেকে আজ ৫-১০ টাকা কেজিতে বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দোকানদারদের বললে বলে পাইকারী কিনতে হয় বেশি দামে তাই তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। দাম কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দিনে পর দিন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দাম কমছে না।’

মালিবাগ বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আরেক ক্রেতা আনিসুজ্জামান অবজারভার অনলাইনকে বলেন, ‘সরকার যত আশ্বাস দিচ্ছে পেঁয়াজের দাম এই কমে যাচ্ছে ততই আরও বাড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে সরকারও অনেক সময় জিম্মি হয়ে যায়।’

শান্তিনগর বাজারে পেঁয়াজের দাম মঙ্গলবার ছিল ১৩০ টাকা, আজ ১৪০টাকা চাওয়ায় বিক্রেতার ওপর চড়াও হন হাসান নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, ‘গতকাল দাম ছিল ১৩০ টাকা আজ ১৪০ টাকা নিচ্ছে। এভাবে প্রতিদিনই যদি দাম বাড়ে তবে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা আরও সমস্যায় পড়বে।’

জানা যায়, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের জন্য পেঁয়াজের রফতানি মূল্য তিনগুণ করে ভারত। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয় দেশটি। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদায় প্রভাব না পড়ার জন্য এই আদেশ জারি করা হয়।

আদেশে বলা হয়, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকবে।

তবে এ বিষয়ে তখন কিছুই জানতো না বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft