‘ফাঁসি দিলে তো বিনা কষ্টে মারা যাবে আমার মেয়ের হত্যাকারীরা। তাদের যেন পুড়িয়ে মারা হয়। যেন তারা বোঝে, আমার মেয়ে কত কষ্ট পেয়েছে। আমার মেয়ের হত্যার সঙ্গে যত অপরাধী জড়িত ছিল, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
ফেনীর সোনাগাজীরমাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে এমনই আকুতি ঝরলো তার মা শিরিন আখতারের কান্না জড়িত কণ্ঠে। মঙ্গলবার সোনাগাজী পৌর শহরের বাড়িতে তিনি এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে।
নুসরাতের মা বলেন, ‘আমি আমার কলিজার টুকরা মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূক শাস্তি চাই। এমন শাস্তি হোক, যেন পৃথিবীর অন্য কোথাও কোন মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে যে কষ্ট করেছে, এক টুকরো অক্ষত মাংস নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেনি, সেই যন্ত্রণা যেন খুনিদেরও দেওয়া হয়।’
বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা আর দিক-নির্দেশনা না থাকলে এত দ্রুত সময়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব হতো না। তিনি আমাদের পাশে ছিলেন বলেই আসামিদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের খেয়াল না করলে আমাদের অস্তিত্বও থাকতো না।’
আসামিপক্ষ থেকে হুমকি-ধামকির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আসামিরা হুমকি দিচ্ছে, তারা নুসরাতের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে ফেলবে, ঘরে বাতি দেওয়ার মত কোন লোক থাকবে না। নুসরাতের কবর থেকে লাশ গায়েব করার হুমকিও দিচ্ছে তারা।’
নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নুসরাতের মা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ আমাদের পাহারা দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত এবং তারপরও যেন এ নিরাপত্তা থাকে।’
হুমকিদাতাদের ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর জেলে থেকে কী বাকি রেখেছে সে? সে একাই আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র করেছে। আর এখনতো ১৬ আসামি, তারা ইচ্ছে করলে আমাদের বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে।’
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে মামলায় বলা হয়। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।
ওইদিনই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এ হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ফেনীর পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত ২৭ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২৪ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করেন।
এদিকে, অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিষয়ে নুসরাতের অভিযোগ গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনেরও বিচার চলছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,
[ABOUT US][CONTACT US][AD RATE]Developed & Maintenance by i2soft