বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনের সপ্তম দিনে মাঠ ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ঢাকা ছেড়েছেন আবরারের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ।
যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিল দুই ভাই তা নিমিষেই শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ আর নিরাপত্তাহীনতায় ঢাকা ছাড়ার এ সিদ্ধান্ত নেন ফায়াজ ও তার পরিবার।
বুধবার বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক গণশপথে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷ আর এর মধ্য দিয়েই তাদের মাঠের আন্দোলনের আপাতত ইতি টানা হবে৷ তবে আবরার ফাহাদের খুনিদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না শিক্ষার্থীরা৷
এদিকে, বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। তবে ভাইয়ের নির্মম মৃত্যুর পর মঙ্গলবার ঢাকা কলেজ থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে সে। এখন আর ঢাকায় পড়তে চায় না। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়বে ফায়াজ।
গত ১২ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সে জানায়, ভাইকে হারিয়ে সে একা হয়ে পড়েছে। ভাই তার সব বিষয়ে খেয়াল রাখত। ভাই নেই, তাই সেও ঢাকায় থাকবে না।
আবরার ফাহাদ হত্যার পর থেকেই সহপাঠীর হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে বুয়েট। ভর্তি পরীক্ষার কারণে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দেয়া দাবিও অনেকাংশে মেনে নিয়েছে বুয়েট প্রশাসন।
এ নিয়ে মঙ্গলবার আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, 'তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে তিনটি দাবি ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। ইতিমধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন, জবানবন্দি দিয়েছেন, রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বিশেষভাবে তৎপর ছিলেন বলেই এত দ্রুত এত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার ব্যবস্থা স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাবে এবং সুষ্ঠুভাবে বিচার করার মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।'
আন্দোলরত ওই শিক্ষার্থী বলেন, 'বাকি দাবিগুলো ছিল বুয়েট প্রশাসনের কাছে। ইতিমধ্যে বুয়েট প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। জড়িতদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, তদন্তের ভিত্তিতে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তে যদি নতুন কারও নাম উঠে আসে, তাহলে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। আবরারের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেওয়া, বুয়েটে সাংগঠনিকভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করারও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। হলে হলে রাজনৈতিক কক্ষগুলো সিলগালা করা হয়েছে এবং যারা অবৈধভাবে থাকতেন তাদের বের করার কাজও শুরু হয়েছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে নির্যাতনের কথা জানাতে পারেন সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হলে হলে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন হয়েছে এবং হচ্ছে।'
এই ছাত্র তাদের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে বলেন, 'বিগত কয়েক দিন তাঁরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন আবরারের লাশকে ‘পর্দা’ হিসেবে ব্যবহার করে আড়ালে-অন্তরালে অনেক স্বার্থান্বেষী সংগঠন নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এদের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই স্বার্থান্বেষী মহলের এজেন্ডায় বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি। তারা রাজপথে অবস্থান দীর্ঘায়িত করে এসব অপশক্তিকে এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কোনো সুযোগ দিতে চান না।'
গত ০৬ অক্টোবর (রোববার) মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরারকে শের-ই-বাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরদিন সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।
বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ একদল নেতাকর্মী শিবির সন্দেহে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে ছাত্রলীগের তদন্তেও উঠে আসে৷ আসামিদের জবানবন্দির বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে পুলিশও একই কথা বলছে৷ আবরারকে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৫ জন৷
আবরারের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে আগামী মাসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে বলে এর মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম৷
-এমএ