ইলিশ নিষেধাজ্ঞার সময় কিস্তি আদায় বন্ধের দাবি জেলেদের
Published : Wednesday, 16 October, 2019 at 11:12 AM Count : 589
ইলিশের প্রজনন মৌসুম নিরাপদ করতে গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ করছে সরকার। এ সময় মানবিক সহায়তা হিসেবে জেলেদের মাঝে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।
ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় এ চাল বিতরণ করা হলেও ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করা তাদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দেনা থেকে বাঁচতে এক রকম বাধ্য হয়েই এখানকার অনেক জেলেরাই মাছ শিকারে নামেন। এ কারণে অবরোধের ২২ দিন ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেওয়া নেয়া ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন এখানকার ভুক্তভোগী জেলোরা।
উপজেলার কালিকাবাড়ি গ্রামের সবুজ ঘরামী, তালবাড়ি গ্রামের মো. জসিম আকন, মো. আল আমিন আকন, কাউনিয়া গ্রামের লাল মিয়া তলুকদারসহ একাধিক জেলে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে তারা ঋণ নেয়। ঋণের টাকা দিয়ে জাল ও নৌকা তৈরি করে। মাছ বিক্রি করে সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা বেকার থাকেন। এ সময় উপজেলার ৩ হাজার ৫১১ জন জেলের মধ্যে অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে- অনাহারে দিন কাটাতে হয়। অন্যদিকে ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে চাপ দেওয়া হয় তাদের ওপর। কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে চলে মানসিক নির্যাতন। তাই বাধ্য হয়েই অনেকেই মাছ শিকারে যায়।
দক্ষিণ করুনা গ্রামের জেলে আ. খালেক খান বলেন, 'সঠিক সময় কিস্তি না দিতে পারলে পরবর্তীতে ঋণ জুটবে না। আর ঋণ পেলেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সুদ ও কিস্তির কারণে সংসারে আশান্তি লেগে থাকে। কাজেই অনিচ্ছাকৃত হলেও বিকল্প কোন পথ না থাকায় সরকারি আইন উপেক্ষা করে চরম ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামেন। আর সেই মাছ বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করেন।'
স্থানীয়রা জানায়, সরকারের উচিত এই সময়টায় জেলেদের কিস্তি পরিশোধের শর্ত শিথিল করে দেওয়া। তারা যেন কোন ধরনের হয়রানি ছাড়া ঋণ পায় তার ব্যবস্থা করা।
ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম রব শুক্কুর বলেন, 'নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন জেলেদের ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা হলে তারা উপকৃত হতে পারে। কারণ এ সময়টায় জেলেরা যাতে অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে না নামে সে দিকে সকলের গুরুত্বারোপ করা উচিত।'
জাতীয় মৎসজীবী সমিতির উপজেলা সভাপতি আ. রব সিকদার বলেন, 'নিষেধাজ্ঞার সময় এখানকার অধিকাংশ জেলেরাই ধার-দেনা, গাছ বিক্রি ও কেউ কেউ দিনমজুরের কাজ করে চলে। তাই ওই তিন সপ্তাহে ব্যাংক ও এনজিওদের কিস্তি আদায় বন্ধ করা উচিত।'
স্থানীয় এনজিও ইজওয়ার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'যদি কেউ স্বেচ্ছায় ঋণের কিস্তি দেয় তারটাই নেওয়া হবে। তাছাড়া কারো সমস্যা হলে ওই সময়টায় কিস্তি বন্ধ রাখা হবে।'
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল-রাজীব বলেন, 'ব্যাংক ও এনজিও থেকে জেলেদের নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধের বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই। তবে মানবিক কারণে নিষেধাজ্ঞার সময় ঋণের কিস্তি আদায় শিথিলযোগ্য করা হলে জেলেরা ভীষণ ভাবে উপকৃত হতে পারে।'
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাজীব আহসান বলেন, 'জেলেদের সংকটের কথা বিবেচনা করে জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক ও এনজিওদের কিস্তি বন্ধের বিষয় নিদের্শনা দেওয়া হবে।'
-এসকেডি/এমএ