For English Version
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
হোম

সম্রাটের কাকরাইলের সেই যুবলীগ কার্যালয় এখন যেমন

Published : Monday, 7 October, 2019 at 1:20 PM Count : 962


সদ্য বহিস্কৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের কাকরাইলের কার্যালয়ে এখন সুনসান নিরবতা। সম্রাটকে আটকের পর থেকে কার্যালয়ের সামনে রাজনৈতিক কোন নেতাকর্মীর দেখা মেলেনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কার্যালয় ভবনের প্রধান গেট তালাবদ্ধ। ভবনের ভেতর ৩-৪ জন নিরাপত্তাকর্মী অবস্থান করছেন। তারা নিজেদের ভবনের কর্মী বলে দাবি করেন। ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কক্ষ সিলগালা করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা। 

এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, 'ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কক্ষ সিলগালা করা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে এখন পর্যন্ত তেমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই এমন কথায় ওই নিরাপত্তাকর্মী ভবন মালিকের পক্ষ থেকে ভেতরে প্রবেশে বারণ করা হয়েছে বলে নাম না বলেই স্থান ত্যাগ করেন।

ভবনের সামনের দুই পাশের চা দোকানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সম্রাটের আটকের পর সোমবার সকাল থেকে কোন রাজনৈতিক নেতাকর্মী এই কার্যালয়ের সামনে আসেনি। যারা নিয়মিত আসতো তাদের কাউকে দেখা যায়নি।

ভবনের সামনে দিয়ে চলাচল করার সময় পথচারীরা ভবনের দিকে তাকিয়ে দেখছেন।

রোববার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে তাকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় সঙ্গে থাকা যুবলীগের আরেক নেতা এনামুল হক আরমানকেও আটক করা হয়।

পরে তাদের ঢাকায় এনে বাসা ও অফিসে পৃথক তল্লাশি চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে বন্য প্রাণীর দুটি চামড়া, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি অস্ত্র, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্র ও মারধর করার লাঠি উদ্ধার করেছে র‍্যাব। 

বন্য প্রাণীর চামড়া রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। আর আটকের সময় মদ্যপ্ত অবস্থায় ছিলেন আরমান। এ কারণে তাকেও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

সন্ধ্যায় সম্রাটকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আর আরমানকে হেলিকপ্টারযোগে ফেনীতে নিয়ে যায় র‍্যাব। রাতে তাকে ফেনী থেকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাদের বহিস্কারের কথা জানানো হয়।

আক্ষরিক অর্থেই নামের সার্থকতা ছিল সম্রাটের। চালচলন ছিল সম্রাটের মতোই। খাবার খেতেন পাঁচ তারকা হোটেলে, পান করতেন বিদেশি পানি। ছিল জলসা ঘরও। পথে বের হলে সামনে-পেছনে থাকত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বহর। আয়ের উৎস ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজি। অনেক জল্পনার পর সেই ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের হাতে পড়ল হাতকড়া।

ছাত্র রাজনীতি থেকে যুবলীগের রাজনীতিতে এসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হন সম্রাট। তার ক্ষমতার হাত ছিল বেশ লম্বা। সরকারি দলের বড় পদে থাকায় গডফাদার ভাবমূর্তির সম্রাট ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাও ঢালতেন। সে কারণে ক্যাসিনো কাণ্ডে অনেকে ধরা পড়ার পরও সম্রাট ধরা পড়বেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল দলসহ অনেকের ভেতরেই।

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে ও ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ফজলে নূর তাপস শনিবার এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তিনি জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন সম্রাটকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তার বক্তব্যের পর রাত পোহাতে না পোহাতেই আটক হন সম্রাট। আর এর মধ্য দিয়ে তছনছ হয়ে গেল কোটি কোটি টাকার ক্যাসিনো-সাম্রাজ্য।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‍্যাব। অভিযানের পর সবাই নিশ্চিত হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতারাই মূলত এই ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রথম দিন চারটি ক্লাবে অভিযানের সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ হোসেন ভূঁইয়াকে আটক করা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক অঙ্গণের লোকেরা মনে করছিলেন, ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রকই হলেন সম্রাট।

শুধু তাই নয়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে যুবলীগ নেতা সম্রাটের নাম আসতে থাকে। অভিযানে যুবলীগ, কৃষক লীগের কয়েকজন নেতা র‍্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হন। সম্রাট সে সময় দৃশ্যমান ছিলেন। তিনি ফোনও ধরেছেন। কয়েক দিন কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থানও করেছেন। ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অবস্থানকালে শতাধিক যুবক তাকে পাহারা দিয়েছেন। সেখানেই সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একদিন হঠাৎ করেই অজ্ঞাত স্থানে চলে যান সম্রাট। এরপর থেকে তার অবস্থান নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। 

সেই সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছিল, সম্রাট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে আছেন। অভিযানের ১৭ দিন পরে তাকে কুমিল্লা থেকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

অভিযান শুরুর পর গত ২২ সেপ্টেম্বর সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি আদেশ দেশের বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরগুলোতে পাঠানো হয়। তার ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, সম্রাটের ব্যাংক হিসাবে কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে, তার হিসাব দিতে। সেসব হিসাবপত্র এখনো জমা হয়নি।

কুমিল্লা থেকে সম্রাটকে আটকের পর প্রথমে উত্তরায় র‍্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। এরপর কড়া পাহারায় বুলেটপ্রুফ পোশাক ও হাতকড়া পরিয়ে সম্রাটকে নেওয়া হয় কাকরাইলে তার নিজের কার্যালয়ে। পরে তার অফিস ও দুই বাসায় একযোগে অভিযান চালানো হয়। একই সময় আরেক সঙ্গী আরমানের কলাবাগান ও মিরপুর-২ এর বাসায়ও অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানের সময় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।

-এমএ

সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দুটি মামলা হবে
খারাপ কোন কাজে জড়াতে পারেনা সম্রাট, দাবি পরিবারের
কেরানীগঞ্জ কারাগারের সাধারণ সেলে সম্রাট
সম্রাটকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যেসব তথ্য জানাল র‌্যাব
সম্রাট ও আরমানকে ৬ মাসের জেল
সম্রাটের কার্যালয় থেকে অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার
সম্রাট সম্পর্কে যা বললেন দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন (ভিডিও)
সম্রাটের মহাখালী-শান্তিনগরের বাসায় অভিযান
কুমিল্লার ওই বাড়িতে যেভাবে ছিলেন সম্রাট
যুবলীগ থেকে বহিষ্কার সম্রাট-আরমান
সম্রাটকে নিয়ে তালা ভেঙে তার কার্যালয়ে র‌্যাব
দুই বউ দুই বাড়িতে, তিনি থাকতেন অফিসে
ঢাকায় আনা হয়েছে সম্রাটকে
যেভাবে আটক হলেন সম্রাট-আরমান
সম্রাটের উত্থান যেভাবে
যুবলীগ নেতা সম্রাট আটক (ভিডিও)

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft