বগুড়ায় এ বছর কোরবাণির ঈদে সোয়া তিন লক্ষাধিক বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি করা হলেও রোববার পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দেড় লক্ষাধিক চামড়া কিনেছেন। মূল্য বৃদ্ধির আশায় কয়েকজন ব্যবসায়ী সামান্য কিছু চামড়া লবণ দিয়ে রাখলেও দেড় লক্ষাধিক চামড়ার হদিস মিলছেনা। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে জেলা থেকে চামড়া পাচার, মাটিতে পুতে ফেলার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন চামড়া ব্যাবসায়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার চামড়া লবন দেয়া অবস্থায় বিভিন্ন উপজেলায় আছে। বগুড়ার চামড়া ব্যাবসায়ীরা মনে করেন তারা আগামী ১৫ থেকে ১ মাসের মধ্যে জেলা সদরের ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া আনবে।
বগুড়া জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, এবারের ঈদের আগে জেলায় তিন লাখ ৮৮ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কোরবানির উপযোগি ছিল। সেখানে কোরবানি করা হয়েছে, তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ হাজার পশু। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৯৫ হাজার, ছাগল ১ লাখ ৯ হাজার, ভেড়া ২২ হাজার ৪২১ ও মহিষ ২৬৮টি।
তিনি আরও বলেন, চামড়া হিসাব তাদের কাছে নেই, এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়া রফতানির উদ্যোগকে অনেক আড়তদার স্বাগত জানিয়েছেন। জেলার চামড়া ব্যাবসায়ীরা ট্যানারী মালিকদের কাছে বার বার তাগাদা দিয়ে চামড়ার বকেয়া পাওনা পায়নি।
বগুড়ার শেরপুরের চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল জোব্বার ভাট জানান, এ উপজেলায় চামড়া সংরক্ষণের ছয়টি গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে আবদুল লতিফ লাল মিয়া ১৫ হাজার পিস ও অন্যরা সবমিলিয়ে আরো ১৫ হাজার পিস চামড়া কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছেন। এছাড়া সদর বাদে অন্য ১০ উপজেলায় আরো ৩০-৪০ হাজার পিস চামড়া সংরক্ষণ করা হতে পারে।
বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ঈদে ২৭৫ পিস চামড়া কিনেছেন। প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনেন। প্রতি পিস ১০০ থেকে দেড়শ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বাকিতে বিক্রি করেছেন।
আবুল রহমান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, পুঁজির অভাবে তিনি এবার চামড়া কিনতে পারেননি।
বগুড়ায় গরুর চামড়া ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে, ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে। এরপরও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নিজের পুঁজি দিয়ে চামড়া কিনে তা বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়। চামড়ার মূল্য না থাকায় কোরবানিদাতারা চামড়া বিক্রির টাকা এলাকার গরীবদের দিতে পারেননি।
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার জানান, পুরো জেলায় তাদের ৩৮৭ জন সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে তিনিসহ ২০-২৫ জন মালিক ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে গত তিন বছরের বিল কমপক্ষে ৩৫ কোটি টাকা পাবেন। চামড়ার দর পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেয়ায় তারা এবার ঠিকমত চামড়া কিনতে পারেননি। ফলে চামড়ার দাম পড়ে যায়। তারা প্রতি পিস গরুর চামড়া ৬০০ থেকে হাজার টাকায় কিনেছেন। এছাড়া খাসি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় কেনেন। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আরো কম দামে চামড়া কিনেছেন। ফলে কোরবানিদাতারা চামড়ার প্রকৃত মূল্য পাননি। প্রতি পিস চামড়ায় তাদের শ্রমিক ও লবণ খরচ পড়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।
তিনি আরো জানান, জেলার সকল ব্যবসায়ী রোববার পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক চামড়া কিনেছেন। এখনও অনেক ব্যবসায়ী লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করেছেন। তারা পরে বিক্রি করবেন। দেড় লক্ষাধিক চামড়ার হদিস না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী চামড়া পার্শ্ববর্তী নাটোর, গাইবান্ধা ও নওগাঁ জেলায় বিক্রি করেছেন। পরবর্তীতে এসব চামড়া বগুড়ায় আসবে।
এ/এসআর