এক বছর বা দুবছর নয় মেহেরপুর পৌর বাস টারমিনাল নির্মাণ হয়েছে ৯ বছর আগে এবং কোন এক সময় উদ্বোধনও করা হয়। কিন্তু আজও শুরু হয়নি কাঙ্খিত কাজ। একারণেই শহরের প্রবেশমুখে ব্যস্ত রাস্তায় রয়ে গেছে বাসষ্ট্যান্ড। এতে এই এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগেই থাকে। নতুন বাস টারমিনাল চালু না হওয়ায় নানা অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে শহরের উপকণ্ঠে ৮ দশমিক ৪ একর জমির ওপর পৌরসভা ইউজিআই প্রকল্পের আওতায় টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করে ২০১০ সালের ১৫ জুন। মাটি ভরাট করতে ৪৭ লাখ এবং ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করে। একই সময়ে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে টার্মিনালের সম্মুখ ভাগে সীমানাপ্রাচীর, ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে পুলিশ বক্স ও খাবারের হোটলে নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। দুইতলার ঘর গুলোতে বাসে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ রাখা হয়েছে। চারটি ঘরের কাঠের দরজা কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। টার্মিনাল জুড়ে জন্মেছে ঘাস ও আগাছা। শুধুমাত্র প্রবেশদ্বারে ২৫ থেকে ৩০টি বাস রাখা হয়েছে বিক্ষিপ্ত আকারে। সেগুলো মেরামত করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন পরিবহনের নামে বরাদ্দকৃত কাউন্টারগুলি বন্ধ।
শহরের ব্যস্ত সড়কের চলমান বাসষ্ট্যান্ডটি সম্পর্কে স্থানীয়রা বলেন, খুব অল্প জায়গায় অনেক বাস থাকে। তাছাড়া বাসগুলি অন্যত্র ছেড়ে যাওয়ার আগে ব্যস্ততম প্রধান সড়কের উপর অনেকক্ষণ অপেক্ষমান থাকে। এ কারণে ওই সড়কটি সংকুচিত হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে ওই সড়কে যাতায়াত করা মানুষেরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে। তার উপরে ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক আশে পাশে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান নেয় এবং বাস থেকে যাত্রীরা অবতরণের সাথে ইজিবাইক বাসটিকে ঘিরে ধরে রাস্তা ব্যবহারকারিদের দাঁড় করিয়ে দেয়। এতে পুরো সড়কটিই বন্ধ হয়ে যায়। টার্মিনাল চালু হলেই সড়কটি ঝামেলা মুক্ত হবে।
চলতি মাসে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটির সভা ও আইন শৃংখলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান সড়কে গাড়ী না রেখে নতুন টারমিনালে রাখার জন্য। যে নির্দেশ এখনো পুরোপুরি পালন হচ্ছেনা।
টার্মিনালের চায়ের দোকানি হাশেম আলী বলেন, দীর্ঘ বছরেও চালু না হওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টার্মিনালের ভবন। কিছু কিছু স্থানে ছাদফুটো হয়ে পানি পড়ছে। মাত্র ২টা চায়ের দোকান রয়েছে। সেগুলোতে শুধুমাত্র বাস ট্রাক মেরামত করা শ্রমিকেরা আসে। টার্মিনাল চালু থাকলে এলাকাটি জমজমাট ও নিরাপত্তায় থাকতো।
আতাহার আলী নামের এক বাস শ্রমিক বলেন, টার্মিনালটিতে শুধুমাত্র পড়ে থাকা ও মেরামত করতে আসা বাস থাকে। সন্ধ্যা নামলেই একেবারে নির্জন হয়ে যায় এবং মাদকসেবিদের অভয়রণ্যে পরিণত হয়। শহর থেকে এক কিলোমিটার দুরে বলে অনেকে টার্মিনালে গাড়িও রাখতে আসেনা। টার্মিনালে বাস রাখার স্থানগুলো পাকা করা হয়নি। বর্ষায় সেখানে গাড়ি রেখে মেরামতও করা যায়না।
মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, টার্মিনালের অবকাঠামো প্রয়োজন মাফিক সম্পন্ন না হওয়ার কারণে বাস মালিকেরা তাঁদের গাড়ি সেখানে পাঠায়না। তবে মালিক সমিতি যদি চায় তবে শ্রমিকদের কোন আপত্তি থাকবে না।
জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব গোলাম রসুল বলেন, টার্মিনালে গাড়ি রাখার স্থানগুলো প্রয়োজন মাফিক নির্মিত হয়নি। জেলার আইন শৃঙ্খলা ও সড়ক পরিবহণ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতিকে পত্র দিয়ে অনুরোধ করি মেহেরপুর নতুন টারমিনালে চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে বাস রাখা ও ছেড়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁরা আমাদের কথায় সাড়া না দিয়ে উল্টো আমাদের গাড়িগুলিও চুয়াডাঙ্গায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি এই ঈদের আগে কোচ সার্ভিসও ঐ রাস্তায় বন্ধ করেছে।
পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান বলেন, টারমিনালকে পূর্ণতা দিতে এখন শুধুমাত্র টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে। টেন্ডার হলেই খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। এবারে টার্মিনালে একটি মসজিদ, পানির ফোয়ারা, বাস রাখার স্থানগুলো আরসি ঢালাইসহ পুরো এলাকা সীমানা প্রাচীর হবে।
এমআরএ/এসআর