কুমিল্লায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।বরগুনায় ১০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত। গাইবান্ধায় চিকিৎসারত ৩ জন। চট্টগ্রামে ২৩ দিনে ৩১ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত। ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্তকতা জারি। ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাবিতে, শিক্ষার্থীর মৃত্যু। এসব সংবাদ শিরনামে বাড়ছে আতঙ্ক। প্রকাশিত খবরগুলো জানিয়ে দিচ্ছে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে সরকারী ভাবে এখনও ‘মহামারি’ বলা হয়নি, তারপরও পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু কিন্ত খুবই সাধারণ রোগ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.মো.জিলন মিয়া সরকারের মতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৯৫ শতাংশ রোগীর ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। জ্বর থাকলে বুঝতে হবে রোগী ততক্ষণ নিরাপদে আছেন, তবে প্রধান সমস্যা দেখা দেয় জ্বর কমে যাওয়ার পর। তখন রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি জানিয়েছেন, জ্বর হলে প্রথম দিনেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর নিয়ে কোনও রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে ডেঙ্গু ধরে নিয়ে সে অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। সঠিক সময়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে এবং রোগীকে অযাচিত ও অযৌক্তিক ওষুধ না দিয়ে বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় খাবার যেমন তরল, ফলের রসের মতো নানা ধরনের খাবার খেতে দিলে সাধারণভাবে রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে কোনও রোগীর ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হচ্ছে জানা গেলে, তার সঠিক রক্ত সঞ্চালন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। এটা করা হলে শুধু ডেঙ্গুর কারণে রোগীর মৃত্যুর কোনও কারণ নেই।
রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বলও অভিন্ন পরামর্শ দিয়ে বলেন, ডেঙ্গু একটি স্বাভাবিক রোগের মতই। এটি নিয়ে আতঙ্গের কিছু নেই। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে সহজেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ্য হয়ে যায়।
তারমতে, ডেঙ্গুর মৃত্যুঝুঁকির মূল কারণ এতে আক্রান্ত রোগীর রক্তনালীর ছিদ্রগুলো বড় হয়ে যায়। সেই ছিদ্র দিয়ে রক্তের জলীয় উপাদান বের হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায়। এই অবস্থাকে বলে ডেঙ্গু-শক সিন্ড্রোম। মূলত এটাই ডেঙ্গুর মৃত্যুঝুঁকির মূল কারণ।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের জন্য বিশেষ কোন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। যে ডাক্তার ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন বা জানেন এমন ডাক্তারের কাছে সঠিক সময়ে গেলেই সুচিকিৎসা পাবে। ডেঙ্গু হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতাও নেই। তবে ডাক্তারের পরামর্শে ভর্তি হতে পারে। ডেঙ্গু হলে রোগীকে প্রথমেই সিবিসি এবং প্লাটিলেট টেস্ট করতে হবে। এছাড়া ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষা যেমন- এসজিওটি, এসজিপিটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি করাতে হতে পারে। আবার চিকিৎসক যদি মনে করেন রোগী ডিআইসি জাতীয় জটিল কোন সমস্যায় আক্রান্ত সে ক্ষেত্রে প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এপিটিটি, ডি-ডাইমার ইত্যাদি পরীক্ষা করাতে হতে পারে।
তিনি বলেন, এসব টেস্ট দেশের যে কোন হাসপাতাল বা ডায়গনিস্টিক সেন্টার থেকে করাতে পারবে।
ডেঙ্গুর সেবাদানকারী রাজধানীর অন্যতম বেসরকারী প্রতিষ্ঠান "ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল" এর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচাল ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, প্রচুর রোগী ভর্তি হচ্ছে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। এবারের ডেঙ্গুর প্যাটার্নটাও একটু আলাদা। ডেঙ্গু জ্বর মানেই যে শুধু জ্বর, মাথা ব্যাথা, সারাশরীরের ব্যাথা বা র্যাশ দেখা দেয়ারমত লক্ষণ কিন্তু এবার তেমন একটা নয়। এবার যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই সাথে ভীন্ন কোন কমপ্লিকেশন নিয়ে আসছেন। অনেকে একাধিক জায়গা থেকে ব্যার্থ হয়ে আমাদের কাছে আসছেন। তাতে এতটাই বিলম্ব হয়ে যাচ্ছে যে, তখন আর আমাদের কিছুই করার থাকে না। তারা ডেঙ্গু শক সিন্ডোমের সঙ্গে মাল্টি অর্গান ফেইলিয়রের রোগী হয়ে আমাদের কাছে আসছেন। কিন্তু যারা ডেঙ্গুর প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে চলে আসছেন তারা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছে্ন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু কিন্ত খুবই সাধারণ রোগ। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত জ্বর। মানুষ যেমন বলে এটা ভাইরাস জ্বর তেমন চিকিৎসা লাগবে না। ডেঙ্গুও একটা ভাইরাস জ্বর। ডেঙ্গুর আবার কয়েকটা প্রকার আছে। যেমন ক্ল্যাসিকেল ডেঙ্গু, হেমারেজিং ডেঙ্গু আরেকটি ডেঙ্গু স্বক্ট সিন্ডোম উইথ মাল্টিপল কমপ্লিকেটস। যখন ডেঙ্গু হেমারেজিং, ডেঙ্গু স্বক্ট সিন্ডোম হয় তখন কিন্তু আমরা ডাক্তারেরা অসহায়। সঠিক সময়ে ডেঙ্গু রোগী খুব কমই আসছে।
ডেঙ্গু রোগীর প্রধান সমস্যা জ্বর কমে যাওয়ার পর দেখা দেয়া প্রসঙ্গে ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানান, চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের আমরা বলে দিচ্ছি, ডেঙ্গুর পরবর্তীতে পোস্ট ভাইরাল এস্থেনিয়া (রোগীর দুর্বলতা বাড়ে)হয়। এতে করে রোগী হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে গেল। এতে করে সে আরও একটা রোগে আক্রান্ত হবে। তাই ডেঙ্গু রোগীকে বেশি করে ফ্রুটস বিশেষকরে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং বিশ্রামে থাকতে হবে।